লোকসভা ভোট ঘোষণার পর থেকেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল বিজেপির গুন্ডাবাহিনীর দাপাদাপি। আর ভোটের ফল বের হওয়ার পর তা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাংলা থেকে ১৮ আসন পাওয়ায় এখন আরও বেশি আগ্রাসী গেরুয়া শিবির। তাই প্রায় রোজই চলছে তৃণমূল কর্মীদের মারধর, ঘর ভাঙচুর, ঘরছাড়া করার হুমকি। চলছে জোর জবরদস্তি তৃণমূলের পার্টি অফিস দখলও। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁচকুড়ি গ্রামে দলের অন্যতম নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে সামনে পেয়ে আজ তাদের দুর্দশার কথা জানান তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন বিজেপির গুন্ডাবাহিনীর তান্ডবে অতিষ্ঠ বাসিন্দারাও। আর মনে সাহস রাখার আর্জি জানিয়ে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন শুভেন্দু। বললেন, ‘আপনারা ভয় পাবেন না। রাজ্যে তো এখনও আমাদেরই সরকার।’
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের ফল দেখেই বোঝা গেছে, জঙ্গলমহলে নড়ে গিয়েছে দলের ভিত। আর তা গেরুয়া বাহিনীর দাপাদাপির কারণেই। তাই সেখানে বিজেপির সন্ত্রাস রোখার এবং জনসমর্থন পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব নেত্রী তুলে দিয়েছেন শুভেন্দুর কাঁধে। আর সেই দায়িত্ব পালনেই সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আসেন রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী। ঘুরে দেখেন একাধিক গ্রাম। গেরুয়া শিবিরের তান্ডবে ইতিমধ্যেই এই জেলার বহু জায়গায় আঘাত এসেছে দলীয় কার্যালয়ের ওপর। কোথাও তৃণমূলের পার্টি অফিস ভেঙে ফেলা হয়েছে, তো কোথাও দখল নেওয়া হয়েছে। হুমকির জেরে আতঙ্কিত ছন্নছাড়া তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। অবস্থা খতিয়ে দেখতে আজ দিনভর বিশাল কনভয় আর বাইক বাহিনী সাথে নিয়ে জেলার একাধিক জায়গায় ঘুরে বেড়ালেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শুভেন্দু। প্রায় সর্বত্রই তাঁকে ঘিরে নিজেদের অসহায়তার কথা তুলে ধরতে থাকেন দলের কর্মী সমর্থকরা।
এদিন বেলা একটায় প্রথমে জেলার সার্কিট হাউসে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন শুভেন্দু। এরপর সোজা চলে যান সদর ব্লকের পাঁচকুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কালিনগর গ্রামে। তাঁকে কাছে পেয়ে এখানে কার্যত কান্নায় ভেঙে পড়েন মহিলারা। তাঁদের মনোবল বাড়াতে যেমন ভাঙা পার্টি অফিসে নিজের হাতে দলের পতাকা লাগিয়ে দিলেন, পাশাপাশি নানাভাবে আশ্বস্ত করেন তাঁদের। বলেন, ‘এতদিন নির্বাচনী আচরণবিধি থাকায় কার্যত কোনও ক্ষমতাই ছিল না সরকারের। এবার সেই বিধি উঠে গেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী। আমিও একজন মন্ত্রী। বিধায়করা রয়েছেন। কোনও ভয় পাবেন না আপনারা। কোনও ঘটনা হলে আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াবো। মনে শুধু সাহস রাখুন। আমরা এখনও রাজ্যের শাসকদল। কোনও ঘটনা হলে পুলিশকে জানান।’ নন্দীগ্রামের যুব নেতার এই আশ্বাসবাণীতে অনেকটাই আশ্বস্ত তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। আবারও বুকে বল ফিরে পাচ্ছেন। তাঁরা এখন জোট বাঁধছেন, শুভেন্দুর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে প্রতিরোধ গড়ার জন্য।