একেকটা সময় এমন আসে যখন কী করবো, কী বলবো তা চট করে ভেবে ঠিক করা যায় না। যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা, কোন দেশনায়কের আকস্মিক মৃত্যু বা রাজনৈতিক পালাবদল আমাদের এমন পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। এটাও খুব অদ্ভুত ব্যাপার যে ঘটনার অভিঘাতে প্রথমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও মানুষ ঠিক সেই পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর রাস্তা তৈরি করে নেয়। এভাবেই সমাজ এগোয়, দেশ এগোয়, এগোয় সভ্যতা। সাধারণ নির্বাচনের ফল, বিশেষ করে বাংলায়, আমার মত অনেককেই এমন একটা পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আমি নিজেও এমন ফল আশা করতে পারিনি। আমি রাজনীতির লোক নই কিন্তু নিজের মত করে দেশ ও দশের ভালোমন্দ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার চেষ্টা করি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মতামতগুলো লোককে জানাই। অনেকে মানেন, অনেকে মানেন না। সেটা হতেই পারে, সবার মতামত নিয়েই গণতন্ত্র এগোয়।
দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে কিংবা তারও আগে ছাত্র রাজনীতি করার সময় দেখেছি কোন পরিস্থিতিকে বোঝার ব্যর্থতার জন্য কিংবা কোন ভুল সিদ্ধান্তের জন্য কোন জনপ্রিয় দলকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছে, তার জায়গা নিয়েছে কোন উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তি। রাজনীতিতে কোন নতুন শক্তির উত্থান এমন ঘটনারই পরিণতি। একটু মাথা ঠাণ্ডা করে দেশ তো বটেই গোটা পৃথিবীর রাজনীতির দিকে তাকালে দেখবেন এমন ঘটনাই ঘটে চলেছে। আরও দেখবেন, একসময় যারা নানা কারণে পর্যুদস্ত হলেন বা ক্ষমতা থেকে সরে গেলেন তারা আবার ক্ষমতায় দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন। আমাদের দেশের রাজনীতিতে এবং রাজ্য রাজনীতিতে এমন ঘটনা অজস্র, তাই উদাহরণ দিয়ে আপনাদের সময় নষ্ট করবো না।

সাফল্য বা ব্যর্থতা যাই আসুক না কেন মানুষকে পরিস্থিতি মেনে নিতে হবে। সাফল্যের পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে বাড়াবাড়ি বা জনবিরোধী কাজ করে ফেলেন অনেকে। তাদেরকে সেই কৃতকর্মের মাসুল দিয়ে হয়। আবার পরাজয়ের পর কেন হারলাম তার মূল্যায়ন করে ভুলত্রুটিগুলি সংশোধনের পর নতুন শক্তিতে ফিরে আসার ঘটনাও কম নয়। সামান্য জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে আমি যেটুকু বুঝি তাতে মনে হয় সবকিছুর কেন্দ্রে থাকেন মানুষ। রাজনীতিবিদ তো বটেই আমরা সবাই যারা বিভিন্ন পেশাতে রয়েছি সেখানেও মানুষকে বাদ দিয়ে কিছুই হয়না। এককথায় মানুষকে বুঝতে না পারলে, বিশ্বাস করতে না পারলে, মানুষের কথা না ভাবলে, মানুষকে বন্ধুর বদলে শত্রু ভেবে নিলে দল, রাজনীতি, ব্যক্তি, সমষ্টি কোনকিছুই এগোয় না। এই সরল সত্যটাকে না বুঝলে কোন দুঃসময় কাটিয়ে ওঠা যায়না বরং চলে যেতে হয় আরও গভীর অন্ধকারে।
এবার আমি আমার বক্তব্যটাকে আরেকটু সরাসরি করে নেবো। আমি জানি আপনারা আমার কাছ থেকে ঠিক কী শুনতে চাইছেন। আসন সংখ্যার বিচারে এখনও রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির তুলনায় কম হলেও এগিয়ে আছে। কেন এমন হল তার কারণ বুঝতে তাদের মানুষের কাছে যেতে হবে। এটা শুধু দলীয় নির্দেশেই নয়, প্রতিটি সৎ ও আদর্শবাদী কর্মী, নেতা, মন্ত্রীদের নিজের উদ্যোগে একাজটা করতেই হবে। তা নাহলে আর যাইহোক রাজনীতি তার জায়গা নয়। সময় নষ্ট না করে তিনি অন্য কাজে মন দিতে পারেন।
নেতা ও কর্মীদের অভিমান থাকতেই পারে যে এত ভালো কাজ করলাম তার এই প্রতিদান? এমন ভাবাটাই স্বাভাবিক কিন্তু যারা আপনার বা আপনার দলের দিক থেকে মুখ ফেরালেন তাদের দিকটাও ভাবতে হবে। তাদের ভুল ভাবনার সংশোধন করার দায়িত্ব নিতে হবে। এমন তো হতেই পারে তাদের কাছে দলের কর্মসূচী বা প্রকল্পটি ঠিকমত তুলে ধরা হয়নি। হয়তো জানানো হয়নি একাজটা আপনি বা আপনার দলই করছেন। আবার অনেক সময় যারা কর্মসূচীটি রুপায়নের দায়িত্বে আছেন তাদের দুর্নীতি, হামবড়াই ভাব, আলস্য, অকর্মণ্যতার দায়ও দল বা সরকারের ওপর চাপে। এমন ঘটনা ঘটলে তা ঠিক করার দায়িত্ব দল এবং সংশ্লিষ্ট নেতা ও কর্মীদেরই নিতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্থ লোকদের দল থেকে বাদ দিতে হবে। এব্যাপারে কোন দ্বিধার জায়গা নেই।
আত্মানুসন্ধান ও আত্মসমালোচনা দুঃসময়ে এগোনোর আসল শক্তি। তা দল ও সংশ্লিষ্ট নেতা ও কর্মীদের দিশা দেখাতে পারে, এখন সে কাজেরই সময়। সর্বস্তরের নেতা, কর্মীদের এখন এলাকাভিত্তিকভাবে নিজেদের কাজের পর্যালোচনা এবং আত্মসমালোচনার মধ্যে দিয়ে ভুলত্রুটিগুলি সংশোধন করে নিতে হবে। একাজের মধ্যে দিয়েই আবার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা যাবে। দেখবেন তারা নতুন করে আপনাদের কাছে ডেকে নিচ্ছেন।
মানুষই শক্তির উৎস। তাই মানুষকে আঁকড়ে ধরে আবার আপনাদের ফিরে আসতে হবে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত