‘পরাজিত হওয়া মানেই হার নয়’ – ভোট গণনা চলাকালীন এ কথাই জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে টুইটারে এ-ও জানিয়েছিলেন যে, পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করে তবেই যা বলার বলবেন। আজ, শনিবার সেই পর্যালোচনা বৈঠক। তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে ডাকা হয়েছে সব জেলার দলীয় সভাপতি-পর্যবেক্ষক এবং বর্ষীয়ান নেতা-নেত্রীদের। থাকবেন জোড়াফুল প্রতীকে জেতা ২২ সাংসদের পাশাপাশি পরাজিত প্রার্থীরাও। তৃণমূল সূত্রে খবর, কোন আসনে কেমন ফল হল, কেন বিজেপির কাছে তৃণমূলকে কেন এত বেশি আসন খোয়াতে হল, কোথায় কী ত্রুটি ছিল, ঠিক কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল— আজকের বৈঠকে দলনেত্রীর কাছে তার জবাবদিহি করতে হবে সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতাদের। সেইসঙ্গে এই ক্ষয় মেরামত হবে কীভাবে, তা নিয়েও আলোচনা হবে এই বৈঠকে। কারণ এই বৈঠকে পর্যালোচনাতেই সবচেয়ে জোর দেবেন মমতা।
উল্লেখ্য, ফলপ্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরে শুক্রবার আরও একটি টুইট করেন তৃণমূল নেত্রী। সেটি হল তাঁর লেখা একটি কবিতা ‘মানি না’। তবে শুধু বাংলাই নয়। ইংরাজি ও হিন্দিতেও তা টুইট করেন তিনি। তাঁর সেই কবিতায় মমতা তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার রঙ আমি বিশ্বাস করি না/…যারা বিশ্বাস করেন সহনশীলতায়/ আসুন জাগরিত করুন একসাথে আসুন সবাই।’ এর থেকেই স্পষ্ট, রাজ্যে তৃণমূলের আসন-ক্ষয় এবং বিজেপির বিপুল অগ্রগতির পিছনে ধর্মীয় মেরুকরণকেই বড় করে দেখছেন তিনি। তবে লোকসভার ফল খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, অনেক দাপুটে নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক নিজেদের কেন্দ্রে হেরে গিয়েছেন। কিছুদিন আগে হাজার হাজার ভোটে জেতা জেলা পরিষদের সদস্যরাও নিজেদের জায়গায় দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে পারেননি। এক্ষেত্রে কী কী বিষয় ভোটের মেশিনে ছাপ ফেলেছে, তা নিয়েও পর্যালোচনা করবেন মমতা।
অন্যদিকে, দলে কোনও অন্তর্ঘাত বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের লক্ষণ দলীয় নেতৃত্বের কাছে ধরা পড়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এ সব দলের সাংগঠনিক বিষয়। দলনেত্রী এ ব্যাপারে নিজেই শনিবার পর্যালোচনা করবেন।’ সেইসঙ্গে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যেমন একসঙ্গে শান্তভাবে ছিলাম, আমরা সেভাবেই থাকব। কেউ কোনও উত্তেজনায় মাথা গরম করবেন না।’ দলের ফলাফলকেও বিপর্যয় বলতে নারাজ পার্থ। বলেন, ‘দল তো পিছিয়ে যায়নি। দল গত বারের থেকেও বেশি ভোট পেয়েছে। ভোটের হার গত লোকসভার ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৩ শতাংশ। আসন ৩৪ থেকে কমে ২২ হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদ থাকবে তৃণমূলেরই। তবে এত উন্নয়নের পরেও কেন এবং কোথায় কোথায় মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। দলের ত্রুটি পর্যালোচনা করা হবে।’