গত বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ভোট গণনা চলাকালীনই টুইট করে তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ‘পরাজিত হওয়া মানেই হার নয়।’ সেইসঙ্গে তিনি এ কথাও জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করে তবেই যা বলার বলবেন। আজ শনিবার ছিল সেই পর্যালোচনা বৈঠক, যা কিছুক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে। আর তারপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা। এবং ভোটের ফল প্রকাশের পর মুখ খুলে প্রথমেই তিনি বলেন, ‘আমাকে পাঁচ-ছ’মাস কাজ করতে দেয়নি। ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি তৈরি করে ভোট করিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পদে আর কাজ করতে চাই না।’
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে ৪২টি আসনের মধ্যে ৪২টিতে জয়ের লক্ষ্যমাত্র বেঁধে দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু রাম-বামের গোপন আঁতাত ও গেরুয়া বাহিনীরি তান্ডবের ফলে তা তো হয়ইনি, উল্টে উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহল থেকে প্রায় সাফ হয়ে গিয়েছে তৃণমূল। এমনকী, দক্ষিণবঙ্গেও বেশ কয়েকটি জেতা আসন হাতছাড়া হয়েছে রাজ্যের শাসক দলের। লোকসভা ভোটে কেন এমন বিপর্যয়? তা পর্যালোচনা করতেই আজ কালীঘাটের বাড়িতে দলের জয়ী ও পরাজিত প্রার্থী এবং বিভিন্ন জেলার সভাপিতি-পর্যবেক্ষকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে ডেকেছিলেন তৃণমূল নেত্রী।
সেই বৈঠকের পরই সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন তিনি। মমতা বলেন, ‘আমি দলের প্রত্যেকের কাছে পদ ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। কিন্তু ওরা চায় আমি থাকি। সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়িয়ে ভোটে জিতেছে বিজেপি। নির্বাচন কমিশন প্রতিনিয়ত ওদের হয়ে কাজ করেছে। আমাদের আসন সংখ্যা কমলেও ভোটের হার চার শতাংশ বেড়েছে।’ এদিন তিনি এ কথাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ছ’মাস ধরে তাঁকে কোনও কাজ করতে দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া টাকা এবং সাম্প্রদায়িকতায় কলুষিত এই ভোট তিনি মানতে পারছেন না। চেয়ার তাঁর কাছে কোনও দিনই দামি ছিল না। থাকবেও না।
মমতার সাফ কথা, ‘অপমানকর কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে সরকার চালিয়েছি। ক্ষমতাহীন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ছিলাম। আমি মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে চাই না। চেয়ার ইজ নাথিং ফর মি। এক মিনিটে রেলমন্ত্রিত্ব ছেড়ে এসেছিলাম।’ সেইসঙ্গে তিনি এ-ও বলে দেন, ‘আমার চেয়ারের কোনও দরকার নেই। চেয়ারের আমাকে দরকার।’ তবে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর করা এত উন্নয়নের পরও ভোটে হারায় আক্ষেপ ঝরে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। বলেন, ‘অনেক উন্নয়ন করেছি। পুরোটাই হয়ে গিয়েছে। এবার দলে বেশি করে সময় দেব।’
কথায় কথায় নিজের মায়ের প্রসঙ্গও টানেন মমতা। বলেন, ‘আমি যখন প্রথম মন্ত্রী হয়েছিলাম, তখন একটি সংবাদপত্র আমার মায়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। সেখানে আমার মা বলেছিলেন, মমতা যেন মমতাই থাকে। মমতা মমতাই আছে। বদলায়নি। একা হয়ে গেলেও সত্যিটা বলব।’ এরপরই তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে প্রচার করা হয়েছে এই নির্বাচনে। আমরা অনেক অভিযোগ জানিয়েছি, কিছু হয়নি। সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে জিতেছে বিজেপি। এই ভোটে তারা যা টাকা খরচ করেছে, তা জানলে কেলেঙ্কারি হবে। রাজ্যে কোনও কাজ করা যাচ্ছে না। এখনও রাজ্যে রেখে দিয়েছে সিআরপিএফ।’ সবশেষে তাঁর সংযোজন, ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। সংবাদ মাধ্যম, নির্বাচন কমিশনও পক্ষপাতদুষ্ট।’