সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন শুরুর আগে থেকেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী এই অভিযোগ করে আসছিলেন যে, এ রাজ্যে রাম-বাম সব এক হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার ভোটের ফল বেরাতেই দেখা গেছে, তাঁর অভিযোগ মোটেই ভুল নয়। বাম ভোটেই বাংলায় রামের বাড়বাড়ন্ত। তবে এতদিন এ নিয়ে নীরব থাকলেও বাম ভোট যে বিজেপির ঝুলিতেই গিয়েছে, অবশেষে দলীয় মুখপত্রে তা স্বীকার করে নিল সিপিএম। তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সাফাই, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তাঁরা আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি।
বস্তুত, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরদিনই তৃণমূলের নেতৃত্ব ফের ‘রাম-বাম’ জোটের অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বাম শিবিরের ভোটেই ফুলে-ফেঁপে উঠেছে বিজেপি। আর রাজ্যের শাসক দলের এমন চাপের মুখে পড়েই সিপিএমের দলীয় মুখপত্রের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ‘১০ শতাংশ থেকে বিজেপির ভোট বেড়ে ৪০ শতাংশের কাছে পৌঁছেছে। বিজেপির এই ভোট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাম সমর্থক মানুষদের সমর্থনের লক্ষ্মণ স্পষ্ট।’ তবে বিজেপির বাড়বাড়ন্তে নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে তারা দোষ চাপিয়েছে তৃণমূলের ওপরই।
দলীয় মুখপত্রে এই বলে সাফাই গাওয়া হয়েছে যে, ‘বাংলার বুকে তৃণমূলের গণতন্ত্র ধ্বংসকারী ও প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির অবশ্যম্ভাবী পরিণতি বিজেপির সার্বিক উত্থান।’ পাশাপাশি এ কথাও জানানে হয়েছে, তৃণমূল পেয়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ ভোট, বামফ্রন্ট ৭.৫ শতাংশ ও কংগ্রেস ৫.৫ শতাংশ। গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় এবার শাসক দলের ভোট তেমন না কমলেও বাম ও কংগ্রেসের ভোট ভালই কমেছে। গণশক্তির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজেপি বিরোধিতা করে সংখ্যালঘুদের ভোট ঘাসফুলে টানতে সক্ষম হয়েছেন মমতা। বড় ক্ষতি হয়েছে বামপন্থীদের।
তবে এই ঘটনার নিবিড় পর্যালোচনারও প্রতিশ্রুতিও দলীয় মুখপত্রের মাধ্যমে দিয়েছেন আলিমুদ্দিনের বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাইরা। এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘ভয়াবহ বিপর্যয় বামপন্থীদের। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট বাংলার বুকে একটি আসনও জয় করতে পারেনি। দল কিন্তু আগে থেকে এই বিপর্যয়ের কোনও অশনিসঙ্কেতই পায়নি।’ দলীয় মুখপত্র আনুযায়ী দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘আমাদের পার্টিজীবনে এত বড় পরাজয়ের মুখোমুখি হইনি। যা আগে অনুমান করা যায়নি।’
সব মিলিয়ে, বাংলার রাজনীতিতে বিজেপির উত্থান যে এক গুরুতর বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে বামপন্থীদের অকপটে তা স্বীকার করেছে সিপিএম। তবে এরই মধ্যে সিপিএমকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বাংলার বুদ্ধিজীবীরা। প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী যেমন বলেন, ‘ভোট হারানোটা এমন কিছু বড় কথা নয়। আসলে দিশাটাই তো এরা বহুদিন আগেই হারিয়ে ফেলেছে।’ আবার সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায়ের মতে, ‘যা ঘটেছে তা স্বীকার না করলে ভন্ডামির অভিযোগ উঠতে পারে। আর আজকের দিনে বিশ্বব্যাপী এটাই প্রবণতা, ভুল স্বীকার করে নেওয়া।’