লাল পোস্টার। তাতে দেখা যাচ্ছে, শ্রীকৃষ্ণের মতো পোজে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে আলোর ছটা। আর তাঁর দিকে তাকিয়ে হাত তুলে দিয়েছেন অগুনতি ভক্ত-কমরেড। যেন বিশ্বরূপ দর্শন করছেন! সঙ্গে লেখা- ‘আগামী ২৩শে মে ফিরছে সেলিম’! তবে তার চেয়েও আশ্চর্যের বিষয়, এই পোস্টারটি পোস্ট করেছেন স্বয়ং সেলিমই! যিনি রায়গঞ্জের বিদায়ী সাংসদ তথা এবারও সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন।
হ্যাঁ, ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় রায়গঞ্জের ভোটের পর নিজেই নিজের ফেসবুক পেজে এমন পোস্ট করেছিলেন এই সিপিএম নেতা। যেখানে সিপিএমে ব্যক্তি প্রচার কার্যত নিষিদ্ধ। কিন্তু তাতে কী? নিয়মনীতির থোড়াই পরোয়া করেন এই ‘ফেকু কমরেড’! তাই ‘মার্ক্স, এঙ্গেলস, লেনিন, স্ট্যালিন, উই শ্যাল ফাইট, উই শ্যাল উইন’ স্লোগান ছেড়ে ‘ফিরছে সেলিম’ বলেই বাজার গরম করতে চেয়েছেন তিনি। ভাবখানা এমন, যেন মার্ক্স, এঙ্গেলস, লেনিন, স্ট্যালিন, মাও আর হো-চিন-মিনের পরেই তাঁর স্থান।
তবে সত্যিই কি ফিরছেন সেলিম? জবাবে ভোটবাক্স বলছে কাঁচকলা। কারণ ভোট গণনায় দেখা যাচ্ছে, রায়গঞ্জে এখনও পর্যন্ত বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী শ্রীমতী দেবশ্রী চৌধুরী। তাঁকে জোর টক্কর দিচ্ছেন তৃণমূলের কানাইলাল আগরওয়াল। আর এই দুজনের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। তবে নিন্দুকরা বলছেন, আসলে বুঝতে ভুল হয়েছিল সকলের। আসলে রায়গঞ্জের মানুষ একেবারে বাড়ির পথ দেখিয়ে দিয়েছিল আলিমুদ্দিনের এই ‘এলিট বাবু’কে। সেই পথ ধরে সোজা বাড়িই ফিরে আসছেন সেলিম।
প্রসঙ্গত, নিজেকে বরাবর সর্বহারা শ্রেণীর প্রতিনিধি বলেন সেলিম। মেহনতি মানুষের ‘কন্ঠস্বর’ই নাকি তাঁর কন্ঠে। অথচ দিন কয়েক আগেই সল্টলেক ও শিলিগুড়িতে তাঁর দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে উঠেছিল একাধিক প্রশ্ন। উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনকে সেলিমের দেওয়া হলফনামায় দেখা গেছে, সল্টলেক এবং শিলিগুড়িতে সেলিমের আরও দুটি ফ্ল্যাট আছে। যে সে ফ্ল্যাট নয়, একেবারে হাজার স্কোয়্যার ফুটের ওপর। আর সেই জোড়া ফ্ল্যাটের দাম মাত্র ২১ লাখ টাকা। সেখানেই ওঠে প্রশ্ন। মাত্র ২১ লাখ টাকায় জোড়া ফ্ল্যাট কার থেকে ‘জোগাড় করলেন’ মহম্মদ সেলিম!
অবাক করার মতো বিষয়, এর মধ্যে সল্টলেকের ফ্ল্যাটটি ১, ২১৯ স্কোয়্যার ফুটের। আর দাম? মাত্র ৯.৭০ লাখ টাকা। প্রশ্ন, সল্টলেকের মতো জায়গায় ১,২১৯ স্কোয়্যার ফুটের ফ্ল্যাটের দাম কী করে ৯.৭০ লাখ টাকা হয়? এই ফ্ল্যাটটি নেওয়া হয়েছিল সেলিমের স্ত্রীর নামে। শিলিগুড়ির ফ্ল্যাটটিরও একই চিত্র। সেটাও আলিশান এবং স্ত্রীর নামেই কেনা। এবং দাম মাত্র ১২ লাখ টাকা। এই খবর জানাজানি হতেই মুখ পুড়েছিল সেলিমের। কারণ সাধারণ মানুষের অভিযোগ, কেনা নয়, কম টাকা দিয়ে বাগানো হয়েছে ফ্ল্যাট ২টো।
তারপরেও অবশ্য লজ্জা হয়নি সেলিমের। ভোটপর্ব মিটতেই নিজে জিতবেন বলে নিজের গুণগান গাইতে দেখা যায় তাঁকে। তবে কথায় বলে, ‘কনফিডেন্স ভাল, ওভার কনফিডেন্স নয়’। ফলে সেই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই কাল হল তাঁর। নিজের নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে আত্মতুষ্ট সেলিমকে উচিত শিক্ষা দিল মানুষই। তবে তাতেও কি দমে যাওয়ার পাত্র সেলিম? ভোটে হারলেও মার্ক্স, এঙ্গেলস, লেনিন, স্ট্যালিন, মাও আর হো-চিন-মিনদের মতো কমিউনিজমের মুখ হতে চাওয়া এই সর্বহারা নেতার সামনে এখন একটাই লক্ষ্য, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ‘মিউজিয়ামে’ স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা।