২০১৪ সালের পর ২০১৯। রেকর্ড আসনে জিতে সিংহাসন ধরে রেখেছে নরেন্দ্র মোদীর দল। গোটা দেশের পাশাপাশি বাংলাতেও ভালো ফল করেছে বিজেপি। তবে এই জয়কে কাটাছেঁড়া করলে দেখা যাবে তৃণমূল নয়, বিজেপির জয়ের পথে অনুঘটকের কাজ করেছে বামেরা। বরং মেরুণকরণের রাজনীতির মাঝেও ভোটের শেয়ার বাড়িয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
ভোটের আগে নানা প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠারেঠোরে সতর্ক করেছিলেন বামেদের। কোনওভাবেই বাম ভোট যাতে বিজেপিতে না-যায়, তাও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। লোকসভা ভোটে বাম ভোট ঝেঁটিয়ে নিয়ে গেল বিজেপি। গণনার মাঝামাঝি অবস্থার ট্রেন্ড বলছে, ২০১৪ সালে যেখানে তৃণমূলের ভোটের শেয়ার ছিল ৩৯.০৫ শতাংশ, সেখানে ২০১৯-এ তা বেড়ে হচ্ছে ৪৬ শতাংশ। অর্থাত্ মোদী ঢেউ প্রভাব ফেলতে পারেনি তৃণমূলের ভোটব্যাংকে। এই বাজারেও ৬ শতাংশ ভোটের শেয়ার বাড়িয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
এ বার বামেদের পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখা যাক। ২০১৪ সালে মোট ভোটের ২৯.৭১ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের দল। এ বার সেই হার দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশে। অর্থাৎ হিসেব বলছে, ভোট কমেছে ২৩ শতাংশ। তাহলে বামেদের এত ভোট গেল কোথায়? ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে বিজেপির ভোট শেয়ারের দিকে চোখ রাখলে। গত লোকসভা ভোটে ১৭.০২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। সেখানে এ বার তাদের দখলে ৪০ শতাংশ ভোট। অর্থাত্ এক ধাক্কায় তাদের ভোট বড়েছে ২৩ শতাংশ।
কীভাবে এমনটা সম্ভব হল? বিশেষজ্ঞদের অনুমান, তৃণমূল বিরোধিতার জন্য সামনাসামনি বিজেপির হাত না-ধরলেও ভোটবাক্সে পদ্মফুলেই ভরসা রেখেছেন বাম সমর্থকরা। গণনার দিন ব্যারাকপুর কেন্দ্রে অর্জুন সিং-এর ভোট বাড়ার খবরেও যেভাবে সিপিএম প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে খোশমেজাজে দেখা গেল, তাতে মানুষের মনে আরও বেশি করে প্রশ্ন দানা বেঁধেছে বলে মত নানা মহলের। একই ছবি দেখা গিয়েছে জয়নগরেও।
যাদবপুরের মতো বামেদের শক্ত ভিতেও সিপিএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা। ভোট ভাগাভাগিতে গতবারের মতো এ বারও সবার পেছনে রয়েছে কংগ্রেস। ২০১৪-য় অধীর অ্যান্ড কোম্পানি ৯.৫৮ শতাংশ ভোট পেলেও ৩ শতাংশ ভোট কমে এ বার তাদের ঝুলিতে ৭ শতাংশ ভোট।