এ যেন এক অন্য কাঁকিনাড়া। যে কাঁকিনাড়ার গায়ে রাজনৈতিক উত্তাপের আঁচ খুব একটা লাগেনি কখনও সেই কাঁকিনাড়াই গত কয়েকদিন ধরে মারাত্মক উত্তপ্ত। রবিবার উপনির্বাচনের দিন থেকেই বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলায়, বোমাবাজিতে, গুলির শব্দে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। তবে গতকাল যেন মাত্রা ছাড়াল সবকিছু। দীর্ঘক্ষণ ট্রেন অবরোধই নয় শুধু, আতঙ্কিত যাত্রীদের উদ্দেশ্য করে পাথর ছোঁড়া, মহিলা কামরা উদ্দেশ্য করে বোমা ছোঁড়া, হুমকি দেওয়া সব মিলিয়ে কাঁকিনাড়া সাক্ষী থাকল এক কালো দিনের।
সোমবার সারা রাত এলাকা জুড়ে চলেছে দুষ্কৃতী–তাণ্ডব, বোমাবাজি। মঙ্গলবার সকাল হতে না হতে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাটপাড়া। মঙ্গলবার সকালে কাঁকিনাড়া স্টেশনের কাছে ডাউন নৈহাটি লোকাল লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা বোমা ছোঁড়ে। ডাউন শান্তিপুর লোকালে মহিলা কামরা উদ্দেশ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়। আতঙ্কিত মহিলা যাত্রীরা ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে নামতে বাধ্য হন। কেউ ছবি তুলে রাখতে চাইলে দুষ্কৃতীরা তাঁদের উদ্দেশ্য করে পাথর ছোঁড়ে।
গতকাল প্রায় ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল ট্রেন। বোমার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সকলেই। বাধ্য হয়ে ওই তীব্র গরমেও ট্রেনের দরজা জানালা বন্ধ করে দেন যাত্রীরা। অসুস্থও হয়ে পড়েন অনেকে। কেউ বা আবার ব্যান্ডেল হয়ে হাওড়া দিয়ে অফিস আসার চেষ্টা করেন। অসহায় অবস্থার মুখে পড়তে হয় মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের। বিকেলের দিকে জগদ্দলে পৌঁছে অবস্থা আয়ত্তে আনার চেষ্টা করে পুলিশ। দৈনন্দিন সন্ত্রাসের জেরে স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভাটপাড়া এলাকায়। রাস্তাঘাট শুনশান। দোকানপাট বন্ধ। বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন মানুষ। স্থায়ী বাসিন্দাদের কাছে এমন কাঁকিনাড়া খুব অচেনা।
এ সবের পেছনে রয়েছে বিজেপি নেতা অর্জুন সিং। এমনই অভিযোগ করে নির্বাচন কমিশন, জেলাশাসকের কাছে অবিলম্বে অর্জুনের গ্রেপ্তারির দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্র। বারাসতে জেলাশাসকের দপ্তরে যান খাদ্যমন্ত্রী ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সঙ্গে ছিলেন মদন মিত্রও। জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের কাছে তিনি অভিযোগ করে জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাঁদানে গ্যাসের সেল ব্যবহার করছেন অর্জুন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ভাটপাড়ায় শান্তি ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। আর তা না হলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভাটপাড়া অভিযান করবে তৃণমূল। জ্যোতিপ্রিয় জানান, ভাটপাড়ায় তৃণমূলকর্মীদের বাড়ি, গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন অর্জুন ও তাঁর অনুগামীরা। এদিন ব্যবহৃত কাঁদানে গ্যাসের সেলের গ্যাস অনবধানতাবশত মদন মিত্রের চোখে লাগায় আধ ঘণ্টা ধরে চোখ খুলে তাকাতে পারেননি তিনি।
তবে এখনও অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী আজকে থেকে আবার চেনা ছন্দে ফিরছে কাঁকিনাড়া । ট্রেন চলাচল হচ্ছে স্বাভাবিক ভাবেই। মানুষজন রাস্তায় বেরোচ্ছেন আস্তে আস্তে। এই নেতিবাচক অধ্যায় দ্রুত মুছে যাক কাঁকিনাড়ার ইতিহাস থেকে। কাঁকিনাড়া থাকুক তার নিজের মতই, তার চেনা পথেই।