বেলজিয়ামের একজন সাংবাদিক যুবক ছুটে চলেছে এক দেশ থেকে আর এক দেশ। কোনো বিপদকে সে ভয় পায় না। বারবার নিজেকে সে জড়িয়ে ফেলে এক একটি দুঃসাহসিক অভিযানে। সে কোনো গোয়েন্দা নয়। তবে সাধারণ মানুষ হিসেবে না থেকে নিজেকে অসাধারণ করে তোলাই যেন তাঁর মূল মন্ত্র। বিপদকে ভয় না পেয়ে বিপদকে জয় করতেই সে বেশি ভালোবাসে। আর তাঁর সঙ্গী বলতে তাঁর প্রিয় ‘স্নোয়ি’। কোনো মানুষ নয়। তাঁর পোষ্য ‘কুকুর’, মানুষের থেকে বেশি বিশ্বাসী। হয়তো আপনারা ঠিকই ধরেছেন কার কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, টিনটিন। সর্বকালের সেরা কমিক চরিত্র। সারা বিশ্বে শৈশব মনে আলোড়ন ফেলে দেওয়া এক চরিত্র। আর এই চরিত্রের নেপথ্যে যে মহান মানুষটি আছেন হার্জ, তাঁরই জন্মদিন আজ।
জর্জে প্রসপের রেমি, বিশ্ববাসীর কাছে হার্জ নামেই পরিচিত। সারা বিশ্বে, বিশেষত ইউরোপে, জর্জ রেমির কমিক্স বইয়ের এখনও একটি বড় প্রভাব রয়েছে। ১৯০৭ সালে আজকের দিনেই এই মহান রূপকার বেলজিয়ামের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট থেকেই অনেক কষ্টের সঙ্গে লড়াই করে তিনি এগিয়েছেন। কিন্তু নিজের আঁকার প্রতি শখকে কোনোদিন মরে যেতে দেয় নি। আর সেই শখেই তিনি ১৮ বছর বয়সে পাড়ি দেন তাঁর স্বপ্নের দুনিয়ায়। ইলাস্ট্রেটর হিসেবে জীবিকা শুরু করেন তিনি ‘সকোটিং’ ম্যাগাজিনে। তাঁর প্রথম সৃষ্টি ‘দ্য এডভেঞ্চার অফ টোটোর’। এই কাজের সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে তিনি ১৯২৯-এ জনপ্রিয় চরিত্র ‘টিনটিন’-এর সৃষ্টি করেন।
তারপর তিনি তিনটিনকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন সোভিয়েত, কঙ্গো, আমেরিকার বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে। সাফল্যের শিখরে ধীরে ধীরে উঠতে থাকেন। তাঁর নিজের ইচ্ছাগুলোকেই তিনি টিনটিনের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে থাকেন। তবে আবার ধাক্কা। বন্ধ হয়ে ম্যাগাজিন। বেকার হার্জের স্বপ্ন হোঁচট খায়। অন্যদিকে বাড়তে থাকে টিনটিনের চাহিদা। এত কিছুর মধ্যেই ১৯৪৬ সালে তিনি প্রকাশিত করেন টিনটিন ম্যাগাজিন। আবার শুরু হয় স্বপ্নের দৌড়।
শুধু টিনটিন নয়, তাঁর কলম থেকে এসেছে অন্যান্য কমিক্স সিরিজের মধ্যে “জো, জেট এবং জোকো” ও “কুইক এ ফ্লুপকে” অন্যতম। বিশ্ববাসীর কাছে হার্জে এইভাবেই তিনি বেঁচে আছেন আজও। শিশু মনে কিংবা শৈশবে বেড়ে ওঠার সঙ্গে টিনটিন যেন স্বপ্ন। সেই গল্প পড়তে পড়তে সবাই স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছাতে চায় টিনটিনের অভিযানে। হার্জের লেখনীর জাদুতে পাঠকরা সঙ্গী হয় টিনটিনের। হার্জ এমনই টিনটিন আবৃত ছিলেন যে তিনি “তাঁতাঁ এ লাল্ফ-আর্ত্” (টিনটিন অ্যান্ড অ্যাল্ফ-আর্ট) লিখতে লিখতেই ১৯৮৩ সালে পরলোকে পাড়ি দেন টিনটিনকে সঙ্গে নিয়ে।