মোদীর রাজনীতির বিরুদ্ধে এবার সরব হল ‘দ্য গার্ডিয়ান’। চলতি মাসেই মোদীকে ‘ইন্ডিয়াস ডিভাইডার ইন চিফ’ আখ্যা দিয়েছিল বিশ্বের অন্যতম এলিট ম্যাগাজিন ‘টাইম’। এবার ‘দ্য গার্ডিয়ান’ লিখল, ‘মোদী শাসনের আরও পাঁচ বছরে ভারত পৌঁছবে অন্ধকারময় যুগে’।
গতকাল অর্থাৎ ২১ মে মঙ্গলবার দ্য গার্ডিয়ানের ওপিনিয়ন বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে কপিল কোমি রেড্ডির একটি প্রবন্ধ। শিরোনাম, ‘ফাইভ মোর ইয়ার্স অফ নরেন্দ্র মোদী উইল টেক ইন্ডিয়া টু এ ডার্ক প্লেস’। লেখকের আশঙ্কা, যদি নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করেন, তাহলে ভেদাভেদের রাজনীতি এবং ধর্মান্ধতাই হয়ে উঠবে প্রজাতন্ত্রের মূল সুর।
দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রবন্ধে কপিল কোমি রেড্ডি দাবি করেছেন, কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি সর্বোপরি তাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ৫ বছর বাদে দেখা যাচ্ছে, সেগুলো কেবল প্রতিশ্রুতিই ছিল। লেখক বলছেন, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নজিরবিহীন সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও যে প্রতিশ্রুতিকে সত্যি ভেবে ভোটাররা ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন, তা পূরণ হয়নি। মোদী ২ কোটি কর্মসংস্থানের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তব হল, মোদী-রাজে বেকারত্বের হার গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মোদী তরুণ প্রজন্মকে স্মার্ট সিটির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যা বাস্তবে লাল ফিতের ফাঁসে আটকে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কীভাবে মোদীর আমলে ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে দখলদারি চালানো হয়েছে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের কথাও উঠে এসেছে প্রবন্ধে। বলা হয়েছে, ১৯৫২ সাল থেকে কীভাবে কার্যত অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সেই প্রতিষ্ঠানকেও কার্যত হাতের পুতুল বানিয়ে ফেলেছেন বলে মনে করছেন লেখক। সেনাকে ভোট ভিক্ষার কাজে লাগানো হচ্ছে, অভূতপূর্ব বিপদের মুখে দেশের বিচারবিভাগ। প্রবন্ধে মনে করানো হয়েছে, ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থার সময়ের কথা।
অধিকাংশ এক্সিট পোল ইঙ্গিত দিয়েছে, নরেন্দ্র মোদী অনায়াসে ক্ষমতায় ফিরছেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হলে, তাঁকে ভোট দেবে কেন মানুষ? কপিল কোমি রেড্ডি বলছেন, এখানেই তুরুপের তাস বের করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তা হল, ধর্মান্ধতা। প্রবন্ধটি লিখতে গিয়ে কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন লেখক। কপিলের মতে, ভারতের হিন্দু ভোটারদের একটা বড় অংশের মধ্যে একটা জিনিস সুকৌশলে পৌঁছে দিতে পেরেছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী, তা হল, প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মোদী মুসলিমদের নিজের জায়গা দেখিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। আর সাধারণ হিন্দুদের মধ্যে এই মনোভাব একবার জায়গা করে নিতে পারলে, বাকিটা নরেন্দ্র মোদী নির্ধারিত পথেই চলতে থাকবে, মনে করেন কপিল কোমি রেড্ডি। আর তাই, ভোটের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হলেও সামগ্রিকভাবে মোদীর উপর ভরসা হারাননি হিন্দু ভোটারদের একটা বড় অংশ। আর এবার ভোটে মোদীর সাফল্যের অর্থ হল, ভারত নামক প্রজাতন্ত্রের মূল সুর হয়ে উঠতে চলেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদ।