ইভিএম নিয়ে কারচুপি হতে পারে, এই আশঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ–ও বলেছেন, হাজার হাজার ইভিএম কারচুপি করে বিজেপি জিততে চাইছে। তাই এবার অতি সতর্ক হতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দলের নেতারা যেখানে কাউন্টিং এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন, সেখানে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, স্ট্রংরুমের সামনে রাতপাহারায় থাকতে হবে কর্মীদের। তার কারণ, যে কোনও সময় ইভিএম পাল্টে দেওয়া হতে পারে। মঙ্গলবার থেকে স্ট্রংরুমের সামনে পালা করে পাহারা দিচ্ছেন তৃণমূলের কর্মীরা। স্ট্রংরুমের সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। ধারেকাছে তাঁরা যাচ্ছেন না। কিছু দূর থেকেই কর্মীরা নজর রাখছেন।
লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগে ইভিএম সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও আরও চিন্তা বাড়াচ্ছে সকলের। যেখানে দেখা যাচ্ছে, রক্ষীবিহীন অবস্থায় ইভিএম আনা-নেওয়ার ছবি। আর এর ফলেই বিজেপির প্রতি ইভিএম কারচুপির অভিযোগ দৃঢ় হয়েছে আরও।
ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখতে ২২টি বিরোধী দলের নেতারা দিল্লীতে নির্বাচন সদনে গিয়েছিলেন। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর, চন্দৌলি, ডোমারিয়াগঞ্জ ও ঝাঁসি-সহ বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিয়ো কমিশন কর্তাদের দেখিয়ে বলেন, নিরাপত্তা রক্ষীদের অনুপস্থিতিতে ইভিএম রাখার ওই ভিডিয়োগুলি মূলত বিজেপিশাসিত রাজ্য থেকেই আসছে। অতএব তাঁদের আশঙ্কা এই সব ইভিএমের মাধ্যমে কারচুপি করতে পারে বিজেপি।
রিজার্ভ ইভিএম-ও নিরাপত্তা রক্ষীর উপস্থিতিতে সুরক্ষিত স্থানে রাখার নির্দেশ কেন কিছু ক্ষেত্রে মানা হয়নি তা নিয়ে নিরুত্তর কমিশন। এ সংক্রান্ত অভিযোগ পরোক্ষে মেনে নিয়ে কমিশন জানিয়েছে, এই সব ক্ষেত্রে তদন্তের পরে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এই অবস্থায় বিরোধী দলগুলির দাবি, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের যে পাঁচটি বুথের ভিভিপ্যাট স্লিপ গোনা হবে, সেগুলি মূল গণনার আগেই গুনে ইভিএমের ফলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হোক। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ পরে বলেন, ‘‘যদি ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের ফল না-মেলে তা হলে সেই কেন্দ্রের সব ক’টি ভিভিপ্যাটের স্লিপ গুনে ইভিএমের ফলের সঙ্গে মেলানোর দাবি জানিয়েছি।’’ কমিশন অবশ্য সব ইভিএম গোনার পরেই পাঁচটি ভিভিপ্যাটের স্লিপ গুনে মিলিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৈঠকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল সব ক’টি ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট মিলিয়ে দেখার অনুরোধ জানান। সূত্র জানিয়েছে, কমিশন কর্তারা জানান, একে সেটি সময়সাপেক্ষ। দ্বিতীয়ত, এই আর্জি জানিয়ে দায়ের করা মামলা সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে গিয়েছে। কমিশনের ওই জবাবে ক্ষুব্ধ চন্দ্রবাবু বলেন, আদালতকে ঢাল করবেন না। এখানে যে ২২টি দল এসেছে তাঁরা দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করে। কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কটাক্ষ, ‘‘নির্বাচন কমিশন একটি মহান সংস্থা। গত দু’মাসে আপনারা যা করেছেন তাতে মহানতর হয়ে উঠেছেন।’’
উল্লেখ্য, সোমবারই অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে এসে আধঘণ্টার ওপর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইভিএম–প্রসঙ্গ। মমতা ইতিমধ্যেই বলেছেন, ‘আমি এই সব সমীক্ষায় বিশ্বাস করি না।’ ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘সমীক্ষা নিয়ে যাঁরা নাচানাচি করছেন তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।’