দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনের দিন ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসকদের কমিটি (সিওএ)। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত নিযুক্ত অ্যামিকাস কিউরি পি এস নরসিংহের সঙ্গে আলোচনার পরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনের দিন চূড়ান্ত হয়। আগামী ২২ অক্টোবর হবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সেই নির্বাচন।
নিবার্চনী অফিসার নিয়োগ করা হবে সিওএ এবং বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর। সবাইকে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে তা জানিয়েও দেওয়া হবে।বিনোদ রাই জানাচ্ছেন, রাজ্য সংস্থাগুলির অ্যাপেক্স কাউন্সিলে থাকবেন মোট ১৯জন সদস্য। আগে ঠিক ছিল, নয় সদস্যের কথা। অ্যামিকাস কিউরিয়ের সঙ্গে কথা বলার পরে সংখ্যাটা ১৯ হয়েছে। সব রাজ্য সংস্থাকেই লোধা কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী নিবার্চন করতে হবে। যে সব সংস্থা তা মানবে না, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।এই নিবার্চন হওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে দেশের ক্রিকেটমহল। সেই ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে বোর্ড চালিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের করে দেওয়া তিন সদস্যের কমিটি। এখন ফের ভারতীয় ক্রিকেট আদালত, আইনজীবী এবং কোর্ট নিযুক্ত কমিটির থেকে মুক্ত হয়ে প্রশাসকদের হাতে যাবে, যাঁদের ক্রিকেট চালানোর কথা।
লোধা কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী, সত্তরোর্ধ্ব কেউ বোর্ডে বা রাজ্য সংস্থার পদে থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া রাজ্য এবং বোর্ড মিলিয়ে মোট ক’বছর পদে থাকা যাবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিভ্রান্তি। এখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, রাজ্য এবং বোর্ডের সংস্থা মিলিয়ে মোট ১৮ বছর পদাধিকারী থাকা যাবে।ভারতীয় বোর্ডে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হওয়া নিয়ে সিওএ প্রধান বিনোদ রাই বলছেন, ‘আমাকে যখন সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে নিয়োগ করা হয়েছিল, আমি বলেছিলাম, আমার ভূমিকাটা নাইটওয়াচম্যানের। কিন্তু নাইটওয়াচম্যানকে বড় দীর্ঘ সময় উইকেটে থাকতে হল। আমি খুশি, আমাদের কাজটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল। কাজটা ছিল, লোধা কমিটির প্রস্তাব যাতে সবাই মেনে নেয়। যা সমস্যা ছিল, তা কথা বলে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। বড় ভূমিকা নিয়েছেন অ্যামিকাস নরসীমা।’ রাই যোগ করেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রশাসকরা দেশে ক্রিকেট চালানোর অধিকারী।’
অন্যদিকে বোর্ড নির্বাচনের আগেই আগেই নির্বাচন হয়ে যাবে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাগুলিতে। ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সিএবিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি তৈরি করে ফেলতেই হবে।মঙ্গলবার বিকেল থেকেই তাই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে সিএবিতে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কি তাঁদের প্রেসিডেন্ট থাকবেন, না কি বোর্ডের শীর্ষ কর্তা হবেন? বোর্ড সচিব হওয়ার রাস্তাও খোলা থাকছে সৌরভের সামনে। লোধার নিয়মে সব দিক থেকেই সৌরভ যোগ্য প্রার্থী। কিন্তু সমস্যা হল, তিনি যদি বোর্ডে আসেন, তা হলে পুরো মেয়াদ থাকতে পারবেন না। লোধার নিয়মে এক পদে তিন বছরের বেশি থাকা যাবে না। ‘কুলিং অফ’-এ যেতেই হবে। সেক্ষেত্রে সৌরভের হাতে থাকবে মাত্র নয় মাসের মতো। এই অল্প সময়ের জন্য তিনি কি দায়িত্ব নিতে চাইবেন? আবার বোর্ডেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কি সৌরভ নির্বাচিত হয়ে যাবেন? সেটাও একটা প্রশ্ন।
তবে সৌরভ যদি সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসেবেই থেকে যান, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে কাউকে দাঁড় করানো হবে না। সেখানেও অবশ্য আর দশ মাস সময় রয়েছে। তারপর কুলিং অফ। সচিব অভিষেক ডালমিয়ার বিরুদ্ধেও হয়তো প্রার্থী দেওয়া হবে না। কিন্তু যুগ্ম সচিব এবং কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচন হবে। সৌরভের দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় আসতে পারেন। সিএবির বিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত বিশ্বরূপ দে মঙ্গলবার রাতে বলে দিলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, স্নেহাশিস সিএবিতে এলে আমি পূর্ণ সমর্থন দেব। এখনও সেটাই বলছি। আর আমি যদি আইএফএতে চলে যাই, তা হলে সিএবি নিয়ে আগের মতো লড়তে চাইব না। আর স্নেহাশিস দাঁড়ালে ওর বিরুদ্ধে কোনও প্রার্থীও দেব না।’