সম্ভবত প্রথম আধুনিক বাঙালি মুক্তমনা রাজা রামমোহন রায়। পরাধীন ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ, যিনি জাতিধর্ম নির্বিশেষে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। আসলে মানুষটার হৃদয়ের ভার ছিল বেশি। আর তাই সে যুগের হিন্দু গোড়ামির নামে মেয়েদের বলি হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। রুখেছিলেন সতীদাহ প্রথা। একই সঙ্গে হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মের গোঁড়ামির মুখেই ঝামা ঘষার আর এক নাম রামমোহন রায়। ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতিবাদ করতে গিয়ে যিনি নিজের আত্মীয়দেরও ছেড়ে কথা বলেননি।
আর তাই রাজা উপাধিটা কেবলমাত্র রামমোহনকেই মানায়। সেযুগের কলকাতার রাজ পরিবার থেকে ভারতের পন্ডিত সমাজ সকলেই ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। হাজার ঝড় বয়ে গেলেও বটবৃক্ষের মতো অটুট থেকে সমাজ গড়েছেন। ছায়া দিয়েছেন সমাজকে। আজ সেই ভারতের প্রথম আধুনিকমনা মানুষ রাজা রামমোহন রায়ের ২৪৭তম জন্মবার্ষিকী।
রাম মোহন রায় বঙ্গভবনে হুগলি জেলার রাধানগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রামকান্ত ছিলেন বৈষ্ণব, তাঁর মা তরিকী দেবী ছিলেন শিবের পরিবার থেকে। তিনি সংস্কৃত, ফারসি ও ইংরেজি ভাষার একজন মহান পণ্ডিত ছিলেন এবং আরবি, ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষাও জানতেন। ১৭৯৬ এবং ১৭৯৭ সালের মধ্যে কেরী, বিদ্যাভগিশ ও রাজা রামমোহন রায় তিনজন মিলে “মহা নির্মান তন্ত্র” নামে পরিচিত একটি ধর্মীয় বই তৈরি করেছিলেন এবং এটি “ধর্মীয় পাঠ্য” সত্য ঈশ্বর”। ১৭৯৭ সালে, রাজা রামমোহন রায় “বানিয়ার” (অর্থদাতা) হয়ে ওঠেন, প্রধানত তাঁদের অর্থের বাইরে বসবাসরত ইংরেজদের ইংরেজদের ঋণ দিতে। রাম মোহনও ইংরেজ আদালতগুলিতে পণ্ডিত হিসেবে নিজের পেশা অব্যাহত রাখেন এবং নিজের জন্য জীবনযাপন শুরু করেন। তিনি গ্রিক এবং ল্যাটিন শিখতে শুরু করেন। সতীদাহ প্রথা রদ করা ছাড়াও রাজা রামমোহন রায় ‘ব্রাক্ষ্ম সমাজ’ গঠন করেছিলেন। আজ সেই বাঙালি পথিকৃৎ-এর জন্মবার্ষিকী। তাঁর উদ্দেশ্যে রইল সশ্রদ্ধ প্রণাম।