গত রবিবারই ইতি ঘটেছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের। ওদিন সন্ধে থেকেই বিজেপির একাধিক ‘পেইড’ মিডিয়া প্রকাশ করেছে তাদের বুথ ফেরত সমীক্ষা। আর তারপর থেকেই একটা রসিকতাই চলছে লোকের মুখে মুখে এবং সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে, সব চ্যানেলেরই তো বুথফেরত সমীক্ষা এল, ‘নমো টিভি’রটা তো এল না? এই রসিকতার মধ্যেই ব্যাপারটা সকলের নজরে আসে। এবং তারপরই কপালে ওঠে সবার চোখ। দেখা যায়, রহস্যজনক ভাবে টেলিভিশনের পর্দা থেকে উধাও হয়ে গেছে ‘নমো টিভি’! বিজেপি সূত্রে খবর, ১৭ মে থেকেই এই চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গিয়েছে, যে দিন ছিল ভোট প্রচারের শেষ দিন।
প্রসঙ্গত, ‘নমো টিভি’ হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম-পদবির আদ্যক্ষর নিয়ে তৈরি ২৪ ঘণ্টার টিভি চ্যানেল। নমোর নির্বাচনী প্রচারের কথা মাথায় রেখে লোকসভা ভোটের ক’দিন আগে, ৩১ মার্চ হঠাৎই এর আবির্ভাব হয়। আর চালুর পরেই চ্যানেলটিকে নিয়ে বিরোধীরা প্রবল আপত্তি তোলে। এখানেই শেষ নয়, প্রশ্ন ওঠে চ্যানেলের ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ শীর্ষক অনুষ্ঠান নিয়েও। এজন্য দূরদর্শনকেও চিঠিও পাঠিয়েছিল কমিশন। মোদীর নামে তৈরি ওই চ্যানেলের লোগো হিসাবেও নরেন্দ্র মোদীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। তা নিয়েও বিরোধীরা অভিযোগ জানায়, শুধু প্রধানমন্ত্রীর প্রচারের সরাসরি সম্প্রচারই নয়, তাঁর বক্তব্য তুলে ধরে লোকসভা ভোটের আগে ভোটারদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রবিবার শেষ দফার ভোটের পর বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়েই সকলের নজর ছিল টেলিভিশনের পর্দায়। ‘নমো-টিভি’ নিয়ে তেমন নজর কারও ছিল না। তবে ভোটের প্রচার শেষ হওয়ার সঙ্গে এই চ্যানেল বন্ধ করার ঘটনায় বিরোধীরা বলছে, এখন প্রমাণ হল নিছক মোদীর প্রচারের জন্যই এই চ্যানেল ব্যবহার করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও এই চ্যানেল চালানোর খরচ কেন বিজেপির খাতে যাবে না? কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি ভোটের মধ্যেই যখন ‘নমো টিভি’ বন্ধ করার দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল, তখন তাদের চাপের মুখে কমিশনও দিল্লীর মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে নির্দেশ দিয়েছিলেন গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে।
শুধু তাই নয়, সেই সময় খোদ মোদী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক জানায়, এই চ্যানেল শুরুর আগে কোনও অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। যে কারণে চ্যানেলের মালিকানা নিয়েও সরকারের কাছে কোনও তথ্য নেই। তারপরই কমিশনের পক্ষ থেকে ওই চ্যানেলের প্রচারের বিষয়বস্তু আগেভাগে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভোটের সময় চ্যানেলটি প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সভা সরাসরি সম্প্রচার করেছিল। বিজেপির পক্ষ থেকে তখন যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যখন অন্য টেলিভিশন চ্যানেল প্রধানমন্ত্রীর সভা সরাসরি সম্প্রচার করতে পারে, তা হলে ‘নমো টিভি’ই বা পারবে না কেন? এই নিয়ে বিস্তর জলঘোলার মধ্যে চ্যানেলটি বহাল তবিয়তে চলতে থাকে। তবে ভোট প্রচার শেষ হতেই এবার তা বন্ধ হয়ে গেল। যার ফলে মান্যতা পেল বিরোধীদের অভিযোগই।