দিন তিনেক আগেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার সময় তিনি ছিলেন ‘নীরব’ মোদী। তারপরই শনিবার কেদারনাথে গিয়ে সেখানের এক গুহায় ধ্যানে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে মোদীর গুহায় ঢোকার আগের ছবি নিয়ে গতকাল গোটা দিন চলে অজস্র রসিকতা। কারণ ছবিতে দেখা যায় ‘রেড কার্পেটে’র ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন মোদী। যেমনটা বিশ্বের বড় বড় ফেস্টিভ্যালগুলিতে দেখা যায়। কিন্তু তাতে কী? ধ্যানভঙ্গ করে আবার সেই ‘বহুচর্চিত’ লাল কার্পেটে দাঁড়ালেন মোদী। কেদারনাথ থেকে বদ্রীনাথে রওনা হওয়ার আগে প্রণাম করতে এলেন মন্দিরে।
এবারের ভিডিওটা মোদী নিজেই টুইট করেছেন। নিজেই বলেছেন, কাল ধ্যানে বসা ইস্তক বহির্জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিলেন। দু’দিন বিশ্রামের সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদও দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে। পুলওয়ামা হামলার সময়ে তাঁর শুটিং করা নিয়ে তুমুল বিতর্কের পরেও দেশের প্রধানমন্ত্রী কীভাবে নিজেকে দিনভর বিচ্ছিন্ন করে রাখলেন, সেই প্রশ্ন উঠল স্বাভাবিক ভাবেই। মোদীর টুইট করা ভিডিওয় অবশ্য কেদারনাথ চত্বরের মাইকে বেজে চলা ভজন ছাপিয়ে শোনা গেল ‘মো-দী মো-দী’ স্লোগান। দেখা গেল, কার্পেটে দাঁড়িয়ে ঘুরে-ঘুরে চতুর্দিকে প্রণাম করছেন মোদী। ফিরে এসেছেন চেনা পোশাক— আকাশি জ্যাকেট ও চুড়িদারে। জ্যাকেটের ওপরে একটা খয়েরি ওভারকোট।
সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে এক সংবাদ সংস্থার দাবি, গতকালের পোশাকটা সচেতন ভাবেই বেছেছিলেন মোদী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে বঙ্গের ভোটারদের আবেগ উস্কে দিতেই নাকি জোব্বা আর গেরুয়া কোমরবন্ধ পরেছিলেন তিনি। আর হিমাচলের ভোটারদের বার্তা দিতে হিমাচলি টুপি। সেই বেশেই কেদারনাথে পুজো, তীর্থক্ষেত্র সংস্কারের নীল নকশা পর্যবেক্ষণ, মন্দির প্রদক্ষিণ, লাঠি হাতে চড়াই ভেঙে পাথুরে খুপরিতে ধ্যান। কতক্ষণ ধ্যান করলেন মোদী? কারও দাবি, ১৫ ঘণ্টা, কারও দাবি ২০। আর মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মোদী বলেছেন, ‘ঈশ্বরের কাছে কিছু চাইনি। তিনি আমাদের দাবির যোগ্য নয়, দানের যোগ্য করেছেন।’
উল্লেখ্য, গতকাল এসবই ছড়ায় নানা নিউজ চ্যানেলে ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর এর ফলে, শেষ দফার ভোটের দিন হওয়া সত্ত্বেও মোদীর ‘ব্যক্তিগত’ সফরের (বকলমে হিন্দুত্ব-প্রচারের) ছবি ছড়াতে দেওয়া হচ্ছে কেন, একযোগে সেই প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর টুইট, ‘এবার কেদারনাথের নাটক। মিস্টার মোদী ও তাঁর গ্যাংয়ের সামনে নির্বাচন কমিশনের আত্মসমর্পণ অবধারিতই ছিল।’ ভোটের প্রচার শেষের পরেও মোদীর কেদারনাথ যাত্রার সম্প্রচার, মাস্টার প্ল্যান নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা— এ সবেতেই আচরণবধি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছে তৃণমূলও।
চিঠি দিয়েছেন টিডিপি নেতা এন চন্দ্রবাবু নাইডুও। সেই সঙ্গে গত শুক্রবারের সাংবাদিক বৈঠকে মোদী কী ভাবে মুম্বইয়ের সাট্টা বাজারের মতো বেআইনি কারবারের উদাহরণ টানতে পারলেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। সবমিলিয়ে ভোট শেষের পরেও স্বস্তিতে নেই কমিশন। মোদীর ধ্যান ইস্যুতে এখনও বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।