বিজেপির একাধিক ‘পেইড’ মিডিয়া তাদের বুথ ফেরত সমীক্ষায় উল্টো সুর গাইলেও এখনও হাল ছাড়ছেন না বিরোধীরা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার স্বপ্ন সত্যি করার লক্ষ্যে ভোট ফুরনোর সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধী জোটের সলতে পাকানো শুরু করে দিলেন তাঁরা। উদ্দেশ্য একটাই, ফল প্রকাশের পরে সরকার গড়তে এনডিএ যদি হোঁচট খায়, তাহলে বিরোধীরা মিলে যাতে তড়িঘড়ি সরকার গড়া যায়।
১৯ জানুয়ারি বাংলার ব্রিগেড ময়দানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার স্বপ্ন বুনে দিয়েছিলেন বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে, সেই মতোই সকলকে এক সুতোয় বাঁধতে এগিয়ে আসেন মমতা অনুরাগী বলে পরিচিত অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে লখনউ গিয়েছিলেন তিনি। মায়াবতী-অখিলেশের সঙ্গে দেখা করতে। এরপর চন্দ্রবাবুর দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মায়াবতী নিজে দিল্লীতে এসে সোনিয়া গান্ধী-রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
উল্লেখ্য, চন্দ্রবাবু দিল্লীতে গিয়ে প্রথমে রাহুল, পরে দশ জনপথে গিয়ে সোনিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। শরদ পাওয়ার, শরদ যাদবের সঙ্গে দেখা করেও লখনউ বৈঠকের নির্যাস জানান। বিরোধী শিবিরের নেতারা এখনও মনে করছেন, বিজেপি কোনও অবস্থাতেই এনডিএ-র বর্তমান শরিকদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়তে পারবে না। কে চন্দ্রশেখর রাও, জগন্মোহন কিংবা নবীন পট্টনায়কদের ওপরে ভরসা রাখতে হবে মোদী-শাহদের। আর কংগ্রেস সূত্রে দাবি, ‘দল একশো আসন তো পাবেই। দেড়শো হওয়াও অবিশ্বাস্য নয়।’
তাদের বক্তব্য, দল যদি দেড়শো আসন পায়, সেক্ষেত্রে রাহুল গান্ধীকে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হবে। যদি ১২০ আসনের কম পায়, সে ক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতেও যে দল রাজি আছে— সেই বার্তা ইতিমধ্যেই পাটনায় দিয়ে এসেছেন গুলাম নবি আজাদ। তিনি বলেছেন, ‘প্রয়োজনে আমরা কর্ণাটক মডেলে জোট সরকারকে সমর্থন করতে রাজি আছি। প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনও দল থেকে হলে কংগ্রেসের কোনও সমস্যা নেই।’ আসলে কংগ্রেস যে এখানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কথাই বলতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট।
আবার অখিলেশ যাদবও বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশে বিরোধী জোট ভাল ফল করবে। চার দিন পরে দেশে নতুন সরকার ও নতুন প্রধানমন্ত্রী হবে।’ উত্তরপ্রদেশে এসপি-বিএসপির সঙ্গে কোনও জোট হয়নি কংগ্রেসের। গোটা ভোট প্রক্রিয়ায় মায়াবতী থেকে অখিলেশ বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসকেও দুষেছেন। কিন্তু ভোট শেষ হওয়ার পরে মায়াবতী যদি এ বারে দিল্লীতে এসে সোনিয়া ও রাহুলের সঙ্গে দেখা করেন, তা হলে সেটিও হবে প্রায় এক বছর পর। গত বছর কর্ণাটকে এইচ ডি কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণেই সকলকে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল।
কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, বুথ ফেরত সমীক্ষা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেলেনি। এ বারেও তাই হবে। কিন্তু এনডিএ-র শরিকদের নিয়ে মোদী যথেষ্ট আসন না পেলে কেসিআর-জগনরা যাতে বিজেপির সঙ্গে না যান, তার চেষ্টা এখন থেকেই করা হচ্ছে। সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়েছে। দূত মারফত কেসিআর জানিয়েছেন, তিনি কোনও অবস্থাতেই বিজেপির সঙ্গে যাবেন না। তাতে তাঁর নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক নষ্ট হবে। আর কেসিআর যেখানে থাকবেন, জগনও সঙ্গে যাবেন বলে জানা গেছে।