লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভোটের মধ্যেই বেসুরো এনডিএ জোটের অন্যতম সঙ্গী নীতিশ কুমার। বিহারে নীতিশের নেতৃত্বেই এনডিএ জোট সরকার চালাচ্ছে। আর তাই নীতিশের এই পাল্টা সুর এনডিএ জোটে ধাক্কার মুখে পড়তে পারে বলে মনে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা তুলে দেওয়া থেকে প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর কিংবা অযোধ্যা ইস্যুতে কার্যত জোটের লাইনের বিরুদ্ধেই কথা বললেন এনডিএ-র শরিক জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ। জম্মু কাশ্মীরের ওই ধারা তুলে দেওয়া উচিত নয়, পটনায় ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের বললেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। নাথুরাম গডসে প্রসঙ্গে সাধ্বী প্রজ্ঞার ভুমিকা ‘অসহ্য’বলেও মন্তব্য নীতীশের।
বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোটে রয়েছে জেডিইউ। এ বার লোকসভা ভোটেও বিজেপির সঙ্গেই আসন সমঝোতা করে লড়ছে নীতীশ কুমার-শরদ যাদবদের দল। কিন্তু শেষ দফা ভোটের আগে যখন এক্সিট পোল নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে এবং ভোটের ফল ঘোষণার দিন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখনই নীতীশের এই জল্পনা উস্কে দেওয়া মন্তব্য রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ভোটের আগে থেকেই বিজেপি প্রচার করে আসছে, ক্ষমতায় এলে জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা তুলে দেওয়া হবে বা সংশোধন করা হবে। কংগ্রেস, জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স অবশ্য প্রথম থেকেই বিজেপির এই প্রচারের বিরোধিতা করে আসছে। বিজেপি তথা এনডিএর শরিক হয়েও নীতীশ কুমার এ দিন ফের বলেন, জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা তুলে দেওয়া ‘জাতীয় ঐক্য ও সংহতির পক্ষে ক্ষতিকারক’। অর্থাৎ কার্যত বিরোধীদের সুরেই কথা বলেন নীতীশ।যদিও নীতীশ গোড়া থেকেই উপত্যকায় এই দুই ধারা তুলে দেওয়ার বিপক্ষে।
এছাড়াও মহাত্মা গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে সাধ্বী প্রজ্ঞা ‘দেশপ্রেমিক’বলেছিলেন। বিজেপির ভোপালের প্রার্থীর মন্তব্য ছিল, গডসে ‘দেশভক্ত ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন’। এই পরিস্থিতিতে নীতীশ কুমার এ দিন আরও কড়া ভাষায় বলেন, সাধ্বী প্রজ্ঞার এই ধরনের মন্তব্য সহ্য করা উচিত নয়। অযোধ্যা ইস্যু নিয়েও তিনি তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন এইদিন। বিজেপির দাবির উল্টো সুরে তিনি বলেছেন যে আদালতের মাধ্যমেই অযোধ্যা বিতর্কের সমাধান হওয়া উচিত।
এছাড়াও বিহারে সাত দফায় ভোটগ্রহণ করা নিয়ে তিনি তাঁর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, প্রচণ্ড গরমে এত দফায় ভোট নেওয়া উচিত নয়। ভোট কেন্দ্রে কোনও শেডের ব্যবস্থা থাকে না। ফলে প্রচণ্ড গরমে রোদে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হয় ভোটারদের। এটা খুবই কষ্টকর।
২৩ মে ঠিক হবে কে দিল্লীর মসনদে সরকার গড়বেন। সেখানে এনডিএ জোটের সঙ্গীদের মধ্যে এহেন মত পার্থক্য ভাবাচ্ছে গেরুয়া শিবিরকে। ফলাফল যাই হোক, শেষ পর্যন্ত যে কোনও শিবিরে ভিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতেই কি নীতীশের এই অবস্থান? জল্পনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক শিবিরের একটা বড় অংশ।