২০১১ সালে পালাবদলের পর বাম নেতৃত্ব বারবার বলতেন, বেনোজল বেরিয়ে গিয়েছে। এখন যা পড়ে রয়েছে তা খাঁটি সোনা। এ বার কি তবে সেই সোনারই কিছুটা বিজেপিতে লগ্নি করেছেন কমরেডরা? রাম-বাম জোটের গতিপ্রকৃতি দেখে এমনই প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এই মুহূর্তে এ রাজ্যের বামপন্থীদের, আরও নির্দিষ্ট করে বললে সিপিএম সমর্থকদের একটা বড় অংশের মতিগতি নজর করলে এমন ছবিই ফুটে উঠছে। সিপিএমের ক্যাডাররা যেন মানসচক্ষে দেখতে পেয়েছেন, এখন বিজেপিকে ভোট দিলেই আখেরে লাল ঝান্ডার ‘অচ্ছে দিন’ ফিরিয়ে আনতে সুবিধা হবে! তাঁদের মনোভাব হল, শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু। তাই তৃণমূলের শত্রু বিজেপি এখন সিপিএমের বন্ধু। তাই লাল আর গেরুয়া শিবির হাত মিলিয়েছে। জোট করেছে রাম-বাম।
স্বধর্মে স্থিত থাকার অভ্যেসটা এ রাজ্যের বামপন্থীরা অনেক দিন আগেই খুইয়ে বসে আছেন। তাই এখন তাদের মনোভাব, তৃণমূলকে হটানোর ‘পবিত্র’ কাজটা বিজেপি করে দিক। তার পর যথাসময়ে সম্প্রীতির সাচ্চা দূত হয়ে আমরা মঞ্চে পুনরবতীর্ণ হব। বস্তুত সিপিএম কর্মী-সমর্থকের একটা বৃহৎ অংশের সঙ্গে আজও বিশ্বাস, ২০১১ সালে তাদের পরাজয়টা খুবই অন্যায্য হয়েছে। তাই তৃণমূল বিপাকে পড়লে তাদের চোখমুখে ‘দ্যাখ কেমন লাগে’-উল্লাসে জ্বলজ্বল করে ওঠে। বিজেপির বাড়বাড়ন্ত তাই বামেদের চোখে প্রায় নবযুগ আনবার একটা পড়ে-পাওয়া সম্ভাবনা বলে প্রতিভাত হচ্ছে। জয় পাওয়া বা নিদেনপক্ষে দ্বিতীয় হওয়া কঠিন হবে মনে হলেই সংশ্লিষ্ট আসনগুলিতে স্থানীয় স্তরে নির্দেশ চলে যাচ্ছে, কোন বোতামটা টিপতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সিপিএম সমর্থকদের কথালাপ দেখলে বোঝার জো নেই, এ বারের ভোটে মূল লড়াইটা মোদীর বিরুদ্ধে না দিদির বিরুদ্ধে। ডিমভাতের রসিকতা, শতরূপ ঘোষের মধ্যমা কিংবা সূর্যকান্ত মিশ্রর বহুচর্চিত টুইট সেই মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ। আসলে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে গিয়ে পদ্মবনকেই ঢাল করছেন বামপন্থীরা।
প্রশ্ন হল, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? ৩৪ বছর ধরে এ রাজ্য যদি ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় হয়ে থাকে তাহলে মমতা কীভাবে একা হাতে খাল কেটে কুমীর আনলেন? একসময় বাম নেতৃত্বের মুখে নিত্য আক্ষেপ শোনা যেত, মমতা বিরোধী রাজনীতির স্বার্থে রাজ্যের উন্নয়নকেও আটকে দিচ্ছেন! আজ যখন মেরুকরণের থাবা তার নখ বার করছে, বামেরা কোন দায়িত্বশীল ভূমিকা নিচ্ছেন, বোঝা ভার। এ রাজ্যে মমতার শাসনের বয়স আট বছর। এখানকার নবগঠিত বানর-সেনাদের বয়স নিশ্চয় আটের বেশি! তাঁরা তার মানে মুখ্যত বাম জমানারই সন্তান! তো, ৩৪ বছর ধরে বামপন্থী সংস্কৃতির কোন ভিত তবে রচিত হল, যা আট বছরেই ধূলিসাৎ? সংখ্যালঘুদের প্রকৃত বন্ধুর কর্তব্য যদি বামেরা পালন করেই থাকেন, তবে সাচার কমিটির রিপোর্ট অমন অন্ধকারাচ্ছন্ন হল কেন?