আগামী কাল শেষ দফার ভোট। এই শেষ দফায় নির্বাচন হতে সম্পন্ন হতে চলেছে কলকাতায়। প্রচার পালা সাঙ্গ। প্রথম দিন থেকেই প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। যেভাবে মমতা তাঁর উন্নয়ন দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন গোটা বাংলাকে, তার প্রভাব পড়বে ভোট বাক্সে, মানুষ থাকবে মমতার উন্নয়নের পাশেই এ নিয়ে একমত সকলেই। তাই নিজের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়।
১৯৭৭ সাল। বারাকপুর কেন্দ্রে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের নেতা মহম্মদ ইসমাইলকে পরাজিত করে প্রথম লোকসভার মঞ্চে পা দিয়েছিলেন সৌগত রায়। বিধানসভার সদস্য থাকার সময় সৌগতবাবুর বাগ্মিতায় মুগ্ধ ছিলেন সরকারপক্ষের অনেকেই। লোকসভায় সদস্য হওয়ার পর থেকে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অনেকেরই নজর কেড়েছেন তিনি। লোকসভায় বিতর্কে অংশ নেওয়া, কোনও বিষয়ে আলোচনা হলে সভার রুল বুক টেনে নিয়ে প্রশ্ন করা, সরকারের আনা বিলগুলি নিয়ে তর্কের সময় তৃণমূলের অবস্থান তুলে ধরা ইত্যাদি আকছার করতেন সৌগতবাবু। ষোড়শ লোকসভায় তাঁর পারফরম্যান্স নজরকাড়া। ২০০৯-এ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে হাজার বিশেক ভোটে অমিতাভ নন্দীর দমদম দখল করেন সৌগতবাবু। যা বাম দুর্গ বলে পরিচিত ছিল। তখনও বামেরা বিশ্বাস করতে পারেননি, দু’বছরের মধ্যে লোকসভার সাতটি বিধানসভাতেই বিপুল ঝাঁকুনি অপেক্ষা করছে।
১৯৭৭ সাল থেকে তিনি শুরু করেছিলেন তাঁর সংসদীয় জীবন। তৃণমূলের টিকিটে দু’বার লোকসভার সদস্য হয়ে হাজিরা-বিতর্ক-প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে শুরু করে অর্থ খরচ, উন্নয়নমূলক কাজ সব কিছুতেই তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। লোকসভায় তাঁর পারফরম্যান্স চমকে দেওয়ার মতোই। আশুতোষ কলেজের অ্যস্ট্রোফিজিক্সের প্রাক্তন অধ্যাপক সৌগত রায় মোট ২২২টি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। প্রশ্ন করেছেন ৫৭০টি। মোট পাঁচটি প্রাইভেট মেম্বার বিল পেশ করেছেন। অধিবেশনের হাজিরাতেও তিনি রয়েছেন প্রথম সারিতে। হাজিরা ছিল ৯০ শতাংশের বেশি। তাঁর এই পারফরম্যান্সের প্রকাশ্যেই প্রশংসা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
এমপি ল্যাডের অর্থ খরচ ও উন্নয়ন পরিকল্পনাতেও তিনি রয়েছেন উপরের সারিতে। গত পাঁচ বছরে এমপি ল্যাডের যে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, তার মধ্যে ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার সুপারিশ করেছেন। ২২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা রিলিজও হয়ে গিয়েছে। সেই অর্থের ৯০ শতাংশ ইতিমধ্যে খরচও হয়ে গিয়েছে দমদম কেন্দ্রের জন্য। এহেন সৌগত রায় তীব্র দাবদাহের মধ্যে ঘাম ঝরিয়েছেন তাঁর দমদম কেন্দ্র দখলে রাখার আশায়। সৌগত নিজেই বলেন, নিজেকে কখনও ক্লান্ত মনে করি না। প্রার্থনা করি, আমার যেন কোনও ক্লান্তি না আসে। যেন নিজের লোকসভা এলাকার কাজ সামলে সংসদের কাজে নিজেকে মেলে দেওয়ার সামর্থ্য থাকে। সংসদে যত বেশি সম্ভব সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। ভগবানের অসীম করুণা, আমার কোনও ক্লান্তি আসেনি।
তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, প্রার্থী হিসেবে এলাকায় এখনও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা সব গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে। দলের দাবি, দমদমের এমপি হিসেবে তিনি যেভাবে চষে বেড়িয়েছেন, আর কোনও এমপি’কে এইভাবে দেখেননি দমদমের মানুষ। রক্তদান থেকে অন্নপ্রাশন যাঁকে সবসময় পাওয়া যায়। সৌগতবাবু ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিলেন মনমোহন সিং সরকারের নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সময় তিনি নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন। ফের সেই কাজের সুযোগ চান তিনি। পাঁচবার বিধানসভার সদস্য ছিলেন। মমতার ‘ক্যারিশমা’ এবং নিজের জনসংযোগের দৌলতে এবারও ভোট বৈতরণি পার হতে পারবেন বলে আশাবাদী সৌগত রায়।