ষষ্ঠ দফার ভোটের আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার মন্ডলবাড় এলাকায় ভারতী ঘোষের গাড়ি থেকে দু’কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। ভোটে টাকা বিলির অভিযোগ উঠেছিল ঘাটালের বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি আসানসোল থেকেও এক কোটি টাকা-সহ গ্রেফতার হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক। শুধু তাই নয়, গত দু’মাস ধরে কলকাতা ও রাজ্যের নানা প্রান্তে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা-সহ বিজেপি সমর্থকরা ধরা পড়েছে। কোনও সদুত্তর দিতে না পারায় টাকা তো বাজেয়াপ্ত হয়েছেই, গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদেরও।
বাজেয়াপ্ত করা টাকা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে। শুক্রবার অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সঞ্জয় বসু জানান, ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে এখনও পর্যন্ত গোটা রাজ্যে ৬৩ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর পেছনে রয়েছেন বিজেপির বড় নেতারাই। এবার রাজ্যে শেষ দফা ভোটের আগেও উদ্ধার হল টাকা! এবং সেখানেও রয়েছে গেরুয়া যোগসাজশ। গ্রেফতার বিজেপি নেতা ও তাঁর ৪ সঙ্গী।
অভিযোগ, উত্তরীয়র মধ্যে টাকার বান্ডিল লুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ একটি সাদা জাইলো গাড়ি (ডব্লুবি ২০জেড ৬১২২) করে যাচ্ছিলেন বিজেপির জেলা নেতা মিন্টু হালদার। ওই গাড়িতে বিজেপির মণ্ডল সম্পাদক ছাড়াও ছিলেন আরও দুই মহিলা। তাঁদের কাছেও টাকা ছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, তাদের পোশাকের মধ্যে ওই টাকা লুকনো ছিল। উদ্ধার হয়েছে একটি ১০ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকার চেক। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ওই চেক। টাকা ছাড়াও কিছু কাগজপত্র, পদ্মফুলের ছবি দেওয়া রাবার স্ট্যাম্প পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সেইসব কাগজে লেখা রয়েছে গোসাবা, কুলতলি, বাসন্তীতে কাকে-কোথায় টাকা দিতে হবে সে সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য। জয়নগরের বিজেপি প্রার্থী অশোক কাণ্ডারি ও বিজেপি পূর্ব জেলার সহ-সভাপতি গোপাল দেবনাথ ওই চেকে সই করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধৃত অন্যরা হলেন, কৌশিক মণ্ডল, সরস্বতী হালদার, নমিতা হালদার এবং সুশীল নস্কর। এ ব্যাপারে বিজেপি প্রার্থী অশোক কাণ্ডারি দায় ঝেড়ে ফেলতে বলেন, ‘যে চেক পাওয়া গেছে তা আমারই। আমি আমার চেক এজেন্টের মাধ্যমে দিয়েছি। সে কোথায় কী সরবরাহ করবে তা সে বলতে পারবে। এটা বেআইনি কিছু নয়।’
উল্লেখ্য, নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয়ভাবে পথে নেমেছিল। এখনও পর্যন্ত ৬ কোটি ৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেখা গেছে, ওই টাকা বিলির পেছনে ভিনরাজ্যের বড় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। আয়কর দফতর ইতিমধ্যেই টাকা ও নগদ মিলিয়ে ২১ কোটি ১১ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে। কলকাতারই একটি নামী ব্যবসায়িক কেন্দ্রে হানা দিয়ে গোপন ভল্ট থেকে বান্ডিল বান্ডিল নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে। আয়কর দফতর জানিয়েছে, ভোটের হাওয়া উঠতেই গত বছর শেষের দিকে নগদ ৮ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিল।
আসলে টাকা ঢুকছে ভিনরাজ্য থেকে। সেখানে হাওয়ালা-চক্রের যোগও মিলেছে। আবার এমনও দেখা গেছে, কলকাতা থেকেই বড় ব্যবসায়ীদের একাংশ টাকা জড়ো করে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অবশ্য তা ধরা পড়েছে পুলিশের তৎপরতায়। টাকাগুলি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বেশিরভাগই নতুন নোটে ৫০০ ও ২০০০। এবং তদন্তে উঠে এসেছে টাকা বিলির চক্রের পেছনে একটি বড় অংশ হল হাওয়ালা-চক্রে জড়িত লোকজন। অন্যদিকে, নিউ টাউন থানা এলাকা থেকে শুক্রবার ৮ লাখ ৫ হাজার টাকা উদ্ধার হল। ধৃতের নাম ইন্দ্রনীল আচার্য। বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। নিউ টাউনের একটি আবাসনে সে কিছুদিন হল থাকছিল। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।