২০০৯ সাল থেকে তৃণমূলের দুর্ভেদ্য গড় বলে পরিচিত ডায়মন্ড হারবার। মমতা–ঝড়ে এক দশক আগে ডায়মন্ড হারবারে পতাকা উড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। এক দশক পর উন্নয়নের হাতিয়ারে দেশের মানচিত্রে উজ্জ্বল ডায়মন্ড হারবার। ইংরেজ আমলে সমুদ্রগামী জাহাজের বিশ্রামের জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল পোতাশ্রয়। সে–সব আর নেই। এখন শিক্ষা, উন্নত স্বাস্থ্য–পরিষেবা আর বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে এগিয়ে চলার স্বপ্ন এলাকায়।
২০১৪ সালের পরে এবারেও ডায়মন্ড হারবার থেকে প্রার্থী হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বার নির্বাচনে লড়ে সিপিএম প্রার্থী ডাঃ আবুল হাসনাতকে ৭১ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত করেন। সাংসদ হয়েই ডায়মন্ড হারবারের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা করতে থাকেন। গত পাঁচ বছর ধরে সেই পরিকল্পনা ফুটে উঠেছে এলাকার উন্নয়নের মধ্যে। তাঁর সাংসদ এলাকার উন্নয়ন নিয়ে অভিষেক দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী এলাকা বারাণসীকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন একাধিক বার।
এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, ২০১৬ সালে জোট বেঁধেছিল সিপিএম–কংগ্রেস। তার পরও তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ২০১৪–র ৭১ হাজার থেকে ২০১৬–তে বেড়ে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার হয়ে গিয়েছিল। এলাকার ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রই ছিল তৃণমূলের দখলে। ২০১৯–এ সিপিএম, কংগ্রেস আলাদা লড়ছে। ফলে ব্যবধান বাড়তেই পারে।
এবারের লোকসভা ভোটে এই এলাকার মানুষেরা কেন্দ্রের সরকার বদলের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। এখানকার বেশ কয়েকজন শ্রমিক ও ওস্তাগরের সঙ্গে কথা বলে তা মালুম হয়।কেন্দ্রীয় নীতির ফলে বজবজের অনেক জুট মিল ধুঁকছে। কাজ হারিয়েছেন প্রচুর শ্রমিক। পাশাপাশি, ডায়মন্ড হারবারকে ঘিরে রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্প নজরে পড়ে। চেওড়ায় গড়ে উঠেছে পূর্বাঞ্চলের প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, মানবী বিদ্যা–সহ একাধিক বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি পড়ানো হয়। রয়েছে গবেষণার সুযোগ। এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠার ফলে সুন্দরবন–সহ এই জেলার মেয়েরা কাছাকাছি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলা হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পাশাপাশি এখানে সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। এখন আর চিকিৎসার জন্য কলকাতায় ছুটতে হয় না। হাসপাতালের পাশেই গড়ে উঠছে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ। ফলতা, ডায়মন্ড হারবার, বজবজে তৈরি হয়েছে পলিটেকনিক ও আইটিআই কলেজ। হয়েছে কিসান মান্ডি।
ডায়মন্ড হারবার লোকসভার চরিত্র মিশ্র প্রকৃতির। এক দিকে বজবজ, মহেশতলা, গার্ডেনরিচের চটকল–শ্রমিক থেকে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত মানুষের বাস। আবার অন্য দিকে ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, নোদাখালি, বিষ্ণুপুরের মতো গ্রামীণ এলাকা। এই এলাকার মধ্যে কেন্দ্রের জিএসটি ও নোটবন্দির দগদগে ঘা এখনও শুকোয়নি। মহেশতলা এলাকার মধ্যে গড়ে উঠেছে একাধিক পোশাক তৈরির কারখানা। এখানাকার তৈরি পোশাক সারা দেশে যায়। যায় বাংলাদেশেও। মূলত নগদ টাকার ওপর নির্ভরশীল এই ব্যবসা। নোটবন্দির ধাক্কার পর থেকে ব্যবসায় মন্দা। আজও সে–ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেননি অনেকেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পোশাক তৈরির সরঞ্জামের ওপর চড়া হারে জিএসটি। ফলে নাভিশ্বাস উঠে গেছে এখানকার ব্যবসায়ী ও শ্রমিক, ওস্তাগরদের। ফলে সকলেই চাইছেন কেন্দ্রের ক্ষমতা থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে।
নির্বাচনের বেশ কিছুদিন আগে বিদায়ী সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হয়েছে ডায়মন্ড হারবারে হুগলি নদীর পাড়ের সৌন্দর্যায়ন। প্রকল্পটি শেষ হলে বিদেশের ধাঁচে পর্যটকেরা নদীর পাড়ে বসে দিনভর উপভোগ করতে পারবেন। পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে। রাজ্যের সামাজিক প্রকল্পের সুফল সব গ্রামেই পৌঁছে গেছে। এই সব কিছুর সুফল যে ভোটবাক্সে পড়বে এবং আগের বারের তুলনায় ব্যবধান বৃদ্ধি হবে এমনই মতামত দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।