বাম আমলে দাদাগিরির আঁতুরঘর ছিল কলেজের ইউনিয়ন রুমগুলি। সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হত গোটা কলেজ। তবে এই তৃণমূলের জমানার ছবিটা কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। কিন্তু তাও বিরোধীরা মাঝেমধ্যে প্রশ্ন তোলে, সত্যিই কি বিভাজন, ভেদাভেদ থেকে এখন কলেজ ক্যাম্পাসগুলি মুক্ত? উত্তর দিলেন দক্ষিণ কলকাতার আশুতোষ কলেজের বাংলার ছাত্র সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এই ক্যাম্পাস থেকেই শিখেছি, বিভেদের মাঝেও কীভাবে মিলন মহান হয়ে উঠতে পারে। সেই শিক্ষা নিয়েই আমরা ফিরে যাই বাড়িতে, পাড়ায়, ক্লাবে। মেনে চলার চেষ্টা করি বিভাজনহীন এক আদর্শ সমাজের স্বপ্ন।’
আশুতোষ কলেজের কমন রুমে তখন অনেকের ভিড়। সদ্য ব্রেক শুরু হয়েছে। কেউ টেবিল টেনিসে ব্যস্ত, অনেকে জটলা পাকিয়ে ক্যারাম বোর্ড ঘিরে। জমাট আড্ডায় সাত-আটজন ছাত্রছাত্রী। সোমনাথ যেমন বাংলার, তেমনি তার মতোই কেউ ইংরেজির, কেউ ইলেকট্রনিক্স, কেউ বিএসসি জেনারেল। কেউ সিনিয়র, কেউ জুনিয়র। ইলেকট্রনিক্সের ছাত্র অনন্য চক্রবর্তী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়েও যদি জানতে চান, বলব এই বিভেদমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যেই আমি ভোট দিতে যাব। ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান রক্ষার ইস্যুকে সামনে রেখে ভোট দিতে চাই।’ অনন্য এ বার প্রথম ভোট দেবেন।
আর এক প্রথম ভোটার, ইংরেজির ছাত্রী বিদিশা সরকার বলেন, ‘রাজনীতিতে মহিলারা দ্বিতীয় শ্রেণির, এই প্রচলিত ধারণা যিনি বদলে দিলেন তিনি এই কলেজেরই প্রাক্তনী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাবলে ভালো লাগে আমি বা আমরা তাঁর উত্তরসূরি।’ বিএ জেনারেলের ছাত্র রাজীব শর্মা অবশ্য বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী কলেজের ছাত্রছাত্রী আমরা। এটা আমাদের গর্বের ব্যাপার। তবে আমি ভোট দেব কাজ দেখে।’ রাজীব কথাটা শেষ করার আগেই বাংলার আর এক ছাত্র প্রতীক রায়চৌধুরীর স্পষ্ট বলে দিলেন, ‘কাজের নিরিখে ভোট হলে তৃণমূলের ৪২টার মধ্যে ৫০টা আসনে জেতা উচিত। বিরোধীরা অবশ্য ভুল বোঝাতে পারে।’
তা শুনে জুলজির কুশল দাসের সকৌতুক মন্তব্য, ‘কোথায় বিরোধী ভাই? আমার কাছে কোনও বিরোধী আসেনি।’ এরপর ফের সোমনাথ বলেন, ‘বিরোধীরা না থাকলেও ফেক নিউজ ছড়িয়ে দিতে আজকাল শুধু ইন্টারনেটই যথেষ্ট। ফলে কে, কোথায়, কী ভাবে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে, সেটা ধরা আজকের দিনে বোঝা কষ্টসাধ্য। তবে হ্যাঁ, পাশে থাকার বার্তা নিয়ে গেলে তৃণমূলই এগিয়ে।’ জুলজির আর এক ছাত্র সত্রাজিত দাসের সংযোজন, ‘একদিকে উন্নয়ন, অন্যদিকে ফেক নিউজ। একদিকে কাজ, অন্য দিকে জুমলাবাজি। সেনার নামে ভোট চাওয়া। এত যদি ৫৬ ইঞ্চির ছাতি হয়, তা হলে কেন মোদী পুলওয়ামায় এত জন জওয়ানকে বাঁচাতে পারলেন না!’ তাঁর প্রশ্ন, মানুষ কি জবাব চাইবে না?’