ক্রিস গেইল, এক দাপটের নাম, এক ঝড়ের নাম। যে ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় প্রতিপক্ষ। আসন্ন বিশ্বকাপই হয়ত তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। তাই বিদায়ী বিশ্বকাপে নিজের সেরা পারফরম্যান্সটা মেলে ধরতে মরিয়া ক্যারিবিয়ান দৈত্য ক্রিস গেইল। বয়স থাবা বসিয়েছে ফিটনেসে। ৩৯ বছরেও বিশ্বকাপের মতো মেগা টুর্নামেন্টের ধকল নিতে হবে প্রায় দেড় মাস ধরে। আর সেই চাপ কাটিয়ে উঠতে জিম নয়, যোগাকেই হাতিয়ার করেছেন গেইল।
কিন্তু ৩৯ বছর বয়সেও কী ভাবে নিজেকে ফিট রাখছেন বিশ্বক্রিকেটের ‘ইউনিভার্স বস’? ফিট থাকার জন্য বিশেষ একটি রুটিন বানিয়ে ফেলেছেন গেল। কি সেই রুটিন? রহস্য ফাঁস করলেন গেইল নিজেই। গেইল জানালেন, “ তাঁর এই ফিটনেস ফর্মুলায় আছে যোগব্যায়াম এবং মাসাজ। যা গেলকে মাঠের ধকল সামলে উঠতে সাহায্য করে। শারীরিক ভাবে বড় এবং শক্তপোক্ত চেহারার মালিক হওয়ার ফলে জিমে না গেলেও সমস্যা হচ্ছে না ক্যারিবিয়ান ওপেনারের। আপাতত গেলের এই রুটিন যথেষ্ট ফল দিচ্ছে। তাঁর শারীরিক শক্তিতে কোনও ঘাটতি দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুরন্ত প্রত্যাবর্তনের পরে আইপিএলেও ভাল রান পেয়েছেন গেল। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে ৪৯০ রান করেছেন, ৪০.৮৩ গড়ে”।
ছক্কা হাঁকানোর ক্ষেত্রে ক্রিস গেইলের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চার ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজে ৩৯টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। আইপিএলে গেইলের ব্যাট থেকে বেরিয়েছে ৩৪টি ছক্কা। তবে চার বছর আগে তাঁকে যতটা ভয়ঙ্কর লাগত, এখন ততটা লাগে না। তার একটা কারণ অবশ্যই বয়স বৃদ্ধি। গেইল বলেছেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়সও বাড়বে। এটাই স্বাভাবিক। বয়স তো আর কমবে না? তবে বাইশ গজে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি মানসিক দৃঢ়তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। মনের জোরে অনেক কিছু করা যায়। সেই কারণে আমি ফুরফুরে মেজাজে থাকি। এই বয়সে শারীরিক সক্ষমতা কমবে। তবে মনের জোরটা একই রকম আছে। মন যেটা করতে চায়, শরীর সেটা অনেক সময় করতে সায় দেয় না। আমি মানসিক দৃঢ়তার সঙ্গে অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এবারের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাফল্য এনে দিতে চাইছি”।
নিজের নতুন রুটিনও পরিষ্কার করে দিয়েছেন গেল। বলেছেন, ‘‘আমি এখন প্রচুর বিশ্রাম নিচ্ছি, মাসাজ নিচ্ছি। স্ট্রেচিং করছি। পরের ম্যাচে নামার জন্য তরতাজা থাকার চেষ্টা করছি। আমি জানি, মাঠে নেমে সেরাটা দিতে গেলে আমাকে কী করতে হবে।’’ গেল জানেন, বিরাট কোহালি যে পদ্ধতি মেনে সাফল্য পাচ্ছেন, সেটা তাঁর পক্ষে মেনে চলা সম্ভব নয়। ‘‘আমাকে আমার নিজের ফর্মুলা মেনে চলতে হবে,’’ বলেছেন ওয়ান ডে ক্রিকেটে ১০ হাজার ১৫১ রানের মালিক।
তাঁর ক্রিকেট জীবনের পরিসংখ্যান বলছে ১০৩ টেস্ট খেলা হয়ে গিয়েছে, ওয়ান ডে খেলেছেন ২৮৯। বিশ্বের সর্বত্র টি-টোয়েন্টি লিগেও দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। আর কী পাওয়ার আছে তাঁর ক্রিকেট থেকে? গেল স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁর আর কিছু পাওয়ার নেই, প্রমাণ করার নেই। তিনি শুধু এখন খেলে চলেছেন তাঁর ভক্তদের জন্য। গেলের মন্তব্য, ‘‘আমি মিথ্যা বলছি না। ভক্তদের কথা ভেবেই এখনও ক্রিকেটটা খেলে যাচ্ছি। বছর দুয়েক আগে হয়তো অবসর নেওয়ার একটা ভাবনা এসে থাকতে পারে, কিন্তু তার পরেই ভক্তরা বলতে থাকল, খেলা ছেড়ো না। ওরাই আমাকে এখনও চালিয়ে নিয়ে চলেছে।’’ এর পরে তিনি যোগ করছেন, ‘‘জানি, কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়। আশা করছি ওদের জন্য আরও কয়েকটা ম্যাচ খেলে যেতে পারব। বিশ্বকাপ জেতার জন্য ওরাই তো প্রেরণা।’’