১৯৯৬ সালে ১৩ বছর বয়সে প্রথম জাতীয় দলে খেলেন পৌলমী। তারপর প্রায় টানা ২০১৪ সাল পর্যন্ত, দীর্ঘ ১৮ বছর জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য সদস্য ছিলেন তিনি। এমন ধারাবাহিকতা পৌলমী ও মৌমা ছাড়া আর কারোর ঝুলিতে নেই। অন্যদিকে সৌম্যদীপও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়। দুজনেরই প্রেরণা গোপীচাঁদ। কিংবদন্তী এই ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ও কোচের আকাদেমির মডেলকে সামনে রেখেই রাজডাঙা ক্লাব সমন্বয়ে বিশ্বমানের টেবল টেনিস আকাদেমির সূচনা করছেন পৌলমী ঘটক ও সৌম্যদীপ রায়। ১ জুন শুরু হচ্ছে এই অ্যাকাডেমি। অর্জুন প্রাপক এই ক্রীড়া দম্পতি এখন পুরোপুরি কোচিংয়ে মনোনিবেশ করেছেন।
পৌলমী যেভাবে ধারাবাহিক ভাবে খেলে গেছেন সাফল্য অর্জন করেছেন তা খুব কম কেউই পেয়েছেন। সন্তানের জন্ম হওয়ার পর থেকেই ফিটনেসজনিত কারণে সার্কিট থেকে সরে আসেন পৌলমী। তাতে তাঁর কোনও আক্ষেপ নেই। বলছিলেন, ‘দীর্ঘ ২০ বছর ভারতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছি। তিনবার জুনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। কমনওয়েলথ গেমসে রুপো। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছি। ফলে টেবলে টেনিস থেকে আমার প্রাপ্তি নেহাত কম নয়। সৌম্যদীপ দু’বারের সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। বর্তমানে জাতীয় টিমের কোচ। আন্তর্জাতিক পদক রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। দীর্ঘদিন ভারতের হয়ে খেলেছে। আমাদের অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য, ভালো খেলোয়াড় তুলে আনা। সৌম্যদীপ লোন করে, অনেক কষ্ট করে এই আকাদেমি তৈরি করেছে। পাশে হোস্টেল তৈরি হবে। অনেক দূরদূরান্ত থেকে ছেলেমেয়েরা টিটি শিখতে আসে। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করব আমরা। রাজডাঙা ক্লাব সমন্বয়ের সভাপতি ও বরো চেয়ারম্যান সুশান্ত কুমার ঘোষ আমাদের সর্বতোভাবে সাহায্য করছেন। এই অ্যাকাডেমিই আমার ও সৌম্যদীপের এখন ধ্যানজ্ঞান।’
ইন্ডিয়ান অয়েলে পৌলমীদের সহকর্মী গোপীচাঁদ। একসঙ্গে তাঁরা অনেক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছেন। একসঙ্গে থেকেছেন। হায়দরাবাদে ইন্ডিয়া ক্যাম্পে গিয়ে গোপীচাঁদের অ্যাকাডেমিতে ঘুরে পুরো পরিকাঠামো দেখেছেন পৌলমী ও সৌম্যদীপ। সেই প্রসঙ্গে পৌলমী বলছিলেন, ‘মাত্র তিনটি কোর্ট নিয়ে গোপীচাঁদ অ্যাকাডেমি শুরু করেছিলেন। এখন তার বিরাট পরিসর। আমরাও ধাপে ধাপে এগতে চাই। শুরু আমরা কেন, বাংলার সব নামী বর্তমান ও প্রাক্তন প্লেয়ারদের আগামী প্রজন্মকে তৈরি করার জন্য এগিয়ে আসা উচিত। গোপীচাঁদের ছাত্র-ছাত্রীরাই বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে সুনামের সঙ্গে খেলছে। আমরা বাংলা থেকে আন্তর্জাতিক মানের প্লেয়ার তৈরি করতে চাই।’
সাতবারের জাতীয় টেবল টেনিস চ্যাম্পিয়ন পৌলমী আরও দুটি জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেলতে চান। সবটাই তাঁর ফিটনেসের উপর নির্ভর করছে। কারণ পৌলমীর সামনে রয়েছে ইন্দু পুরীর (আটবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন) রেকর্ড ভাঙার সুযোগ। পৌলমী বলছেন, ‘দেখুন,আমার সাড়ে তিন বছরের ছেলে রয়েছে। তাঁকে ফেলে রেখে সার্কিটে খেলে বেড়ানো সম্ভব নয়। তবে এখনই অবসরের ভাবনা নেই। আমাকে ওজন কমাতে হবে। একেবারেই দৌড়তে পারি না। দুটো হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। দুটি গোড়ালিতে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছে ডাক্তার’।
পৌলমী আরও জানাচ্ছেন, ‘তাছাড়া এখন টেকনিক্যালি টেবল টেনিস খেলা অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছে। তুখোড় ফিটনেস থাকাটাই আসল কথা। এরপরও আমার আর দুটি ন্যাশনাল খেলার ইচ্ছা রয়েছে। পুরোটাই ফিটনেসের উপর নির্ভর করছে। তারচেয়েও বড় কথা, আমার ও সৌম্যদীপের প্যাশন হল, মন দিয়ে কোচিং করতে চাই। আমাদের স্বপ্ন, ওলিম্পিক টিটি থেকে এ রাজ্যে পদক আনা। কোচ হিসেবে যেন তার সাক্ষী থাকতে পারি। বাংলাতে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে।’