বাকি আর মাত্র এক দফার ভোট। সরগরম ভোটের বাজার। ইতিমধ্যেই যে সমস্ত জায়গায় ভোট হয়ে গেছে সেখানের বাসিন্দারা এখন আলোচনায় মশগুল, যে কে জিতবেন? এরকমই এক আলোচনা করতে করতে দুই দলের দুই সমর্থক শেষে স্ট্যাম্প পেপারের চুক্তি পর্যন্ত নিয়ে গেল এই ব্যাপারকে। যে স্ট্যাম্প পেপারে রীতিমত লেখা থাকল, যে ব্যক্তির দল জিতবে উল্টোদিকের দল থেকে তাঁর প্রাপ্তি হবে ১ লক্ষ টাকা!
হ্যাঁ, প্রিয় দলের আবেগ এতটাই যে এক লক্ষ টাকার বাজি ধরে বসলেন পুরুলিয়ার ২নং ব্লকের ঘোঙা গ্রামের দুই বাসিন্দা মানিক মাহাতো, মন্তা মাহাতো৷ রীতিমতো নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি হয়েছে দু’জনের মধ্যে। চায়ের দোকানে বন্ধুদের আড্ডায় উঠেছিল ভোট-প্রসঙ্গ। পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে জয় কার হবে, তা নিয়ে কথায় কথায় বাজি ধরেছিলেন দুই বন্ধু। কিন্তু তাতে বিশ্বাস ছিল না জনতার। তাই আনা হল ১০ টাকার ‘নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপার’। লেখা হল বাজির শর্ত—যিনি হারবেন তাঁকে দিতে হবে নগদ এক লক্ষ টাকা। সাঁটানো হল দু’জনের ছবি। সাক্ষী হিসেবে সই করেন ২৪ জন। মঙ্গলবার সকালে পুরুলিয়ারঘোঙা গ্রামে হয়েছে এই ‘বেটিং’। বিকেলে সেই স্ট্যাম্প পেপারের ছবি ছড়িয়ে পড়ে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য়।
চুক্তিপত্রে লেখা, ‘অদ্য পঞ্চ ভদ্রায়ন থাকিয়া ১৪.৫.১৯ তারিখে মানিক এবং মন্তা চুক্তি হইল, মৃগাঙ্ক মাহাতো জিতলে মন্তা মাহাতোকে মাণিক মাহাতো এক লক্ষ টাকা দিবে এবং জ্যোতির্ময় মাহাতো জিতলে মানিক মাহাতোকে মন্তা মাহাতো এক লক্ষ টাকা দিবে।’ একেবারে দশ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে জিতবে কে, তা নিয়ে লক্ষ টাকা বাজি ধরেছেন অমৃত ওরফে মন্তা মাহাতো এবং মানিক মাহাতো। শুধু তাই নয়, ওই চুক্তি পত্রে তাঁদের ছবি-সহ সই আছে৷ কার পক্ষে বাজি ধরেছেন,সেসবও উল্লেখ করা হয়েছে৷ চুক্তিপত্রে সাক্ষী হিসাবে সই রয়েছে চব্বিশ জনের।
পুরুলিয়ার মত প্রান্তিক জেলায় ভোটে জয়-পরাজয় নিয়ে এভাবে বাজি অতীতে দেখা যায়নি। ভোটের উত্তাপ যে এভাবে বেটিং-এর স্তরে চলে আসবে, তা দেখে সকলেই তাজ্জব বনে গিয়েছেন৷ অবাক জেলার রাজনৈতিক মহলও। আসলে রাজ্যের ৪২টির মধ্যে এই কেন্দ্র এবার একেবারে ‘হট সিট’। তবে ভোটের হাওয়া বলছে এই আসনে এগিয়ে তৃণমূলই।
ভোটের ফলাফল নিয়ে এভাবে বাজি ধরা একেবারেই নজিরবিহীন পুরুলিয়ায়৷ এই কেন্দ্রের শাসক দলের প্রার্থী মৃগাঙ্কমাহাতো বলেন, ‘ভোটে কেউ জিতবেন, কেউ হারবেন। লড়াইয়ে তো হার–জিত রয়েইছে। কিন্তু এভাবে বাজি ঠিক নয়। এই একই কথা বলেছে বিজেপিও। তবে ভোটের উত্তাপ যে চারদিকে মারাত্মক ভাবে ছেয়ে গেছে সেই কথা প্রমাণিত হল আবারও। আসলে রাজনীতি জিনিসটাই এক ভীষণ বড় আবেগ।