ছিঃ, নির্লজ্জ।
শুধু বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেই ক্ষান্ত হয়নি, তার ‘অশ্লীল সাফাই’-ও দিয়েছে গেরুয়া বাহিনী। আর তারপর থেকেই এমন মন্তব্য ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
গেরুয়া বাহিনীর সেই সাফাইয়ে ঝড়ে পড়ছে সীমাহীন-বেপরোয়া ঔদ্ধত্য। যা করেছি বেশ করেছি মনোভাব। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা যে পূর্ব পরিকল্পিত সেটা ‘ফাটাফাটি’ গ্রুপের ভিডিও ফাঁস হওয়া থেকেই স্পষ্ট। আর মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় গেরুয়া বাহিনী যে এতটুকু লজ্জিত নয়, সেটা তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট থেকে জলের মতো পরিষ্কার। মূর্তি ভেঙে তারা একচুল কুণ্ঠিত তো নয়ই উল্টে সাফাই দিতে গিয়ে যা বলেছে সেটা বিদ্যাসাগরের মতো মনীষীকে গালাগাল দেওয়ার সমান।
বিদ্যাসাগরকেও সাম্প্রদায়িকতার ছাঁচে ফেলে দিয়েছে এই গেরুয়া বাহিনী। লিখেছে, ‘বিদ্যাসাগর হিন্দুদের জন্য কিছুই করেনি’। এমনকী ‘সতীদাহ তুলে দিয়ে হিন্দু ধর্মকে আঘাত করেছিল’ বলেও লেখা হয়েছে। যা শুনে অবাক হচ্ছে প্রাথমিক স্কুল পড়ুয়ারাও। অবাক বিস্ময়ে তারা বলছে, ‘সতীদাহ প্রথা তো রদ করেছিলেন রামমোহন রায়, ওরা বিদ্যাসাগর বলছে কেন? ওরা কি স্কুলে যায় না?’
মূর্তি ভাঙার সাফাই দিতে গিয়ে আসলে সমস্ত শালীনতা অতিক্রম করে গেছে গেরুয়া বাহিনী। একটি পোস্টে সীমাহীন ঔদ্ধত্যে তারা বিদ্যাসাগরকে ইংরেজদের পশ্চাদ্দেশ চাটা ‘মাল’ আখ্যা দিয়েছে। হ্যাঁ পাঠক আপনি ঠিক পড়ছেন, বিদ্যাসাগর ‘মাল’। এখানেই থামেনি তারা। লিখেছে, ‘বর্ণপরিচয় পড়িয়ে বাংলার শিশুদের পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ইংলিশের যুগ। বর্ণপরিচয়ের আর দরকার নেই। তাই এর স্রষ্টার মূর্তি রেখেও আর কোনও লাভ নেই’। অর্থাৎ বিদ্যাসাগরের মূর্তি যে তারা ইচ্ছে করেই ভেঙেছে সেটা পরিষ্কার।
সোজা কথা বিদ্যাসাগরকে গেরুয়া বাহিনীর পছন্দ নয়। আর যাকে পছন্দ নয়, তার মূর্তি রেখে কি লাভ! অতএব ভাঙো বিদ্যাসাগরের মূর্তি। এমন ফ্যাসিস্ত মানসিকতাই গেরুয়া বাহিনীর সঙ্গী।
স্বাভাবিকভাবেই গেরুয়া বাহিনীর এমন মন্তব্যে বেজায় চটেছেন শিক্ষক-অধ্যাপক-পড়ুয়া থেকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষজন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ গেরুয়া বাহিনীর উদ্দেশ্যে উৎপল দত্তের সেই বিখ্যাত উক্তিগুলি ছুঁড়ে দিয়েছেন কমেন্টে, ‘তোরা কি জানিস, বাংলা কথ্য ভাষাকে স্ট্যাণ্ডার্ডাইজ করে গেছেন বিদ্যাসাগর? জনতার ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন ব্যাকরণের ভিত্তিতে? শহর ও গ্রামের ভাষার পার্থক্যকে দূর করে গেছেন? আজ যে কথায় কথায় চেঁচাস গ্রামে যাও, কৃষককে রাজনীতি দাও – বিদ্যাসাগর না থাকলে গাঁয়ে গিয়ে বলতিস কি রে হতভাগা? কি ভাষায় কথা কইতিস কৃষকের সঙ্গে?
(এমন অকথ্য ভাষা প্রদর্শনের জন্য আমরা লজ্জিত। কিন্তু এটাই গেরুয়া বাহিনীর সংস্কৃতি। তাদের মুখোশ খোলার জন্য এই স্ক্রিনশট দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।)