গতকাল কলকাতা তথা বাঙালি জাতির জন্যে এক কলঙ্কের দিন ছিল। গতকাল কলেজ স্ট্রিট থেকে অমিত শাহর রোড শো বিধান সরণির দিকে এগোতেই বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে ধুন্ধুমার বেঁধে যায় ছাত্রদলের একাংশের সঙ্গে মিছিলে অংশগ্রহণকারী বিজেপি কর্মী, সমর্থকদের৷ কলেজের সান্ধ্যক্লাস চলাকালীন ভিতরে ঢুকে দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর চালায়৷ দরজা, জানলা, ক্লাসরুমের ক্ষতি করার পাশাপাশি ভেঙে টুকরো করে ফেলা হয় ঐতিহ্যবাহী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তিটি৷ এতদিনের প্রাচীন ওই মূর্তি টুকরো টুকরো হয়ে যেভাবে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল তা যেন আরও মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছিল আমাদের।

তবে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েও ক্ষান্ত হয়নি বিজেপি। গতকাল রাত থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে কিছু লেখা যেখানে এই নিন্দনীয় ঘটনার জন্যে সরাসরি আক্রমণ করা হচ্ছে তৃণমূলকে। বলা হচ্ছে তৃণমূলই এই ঘটনার জন্যে দায়ী। কিন্তু দেখা যায়, ওই একই সময়ে একই লেখা বেশ কয়েকজন লেখেন এমনকি সকলের যতিচিহ্নের ব্যবহার পর্যন্ত এক! এর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে কি করে একই সময়ে হুবহু একই লেখা এতজন লিখতে পারেন!
এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় গেরুয়া শিবির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এই লেখাগুলি লিখছে, এই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের দায় নিজেদের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে চাপিয়ে দিতে চাইছে তৃণমূলের ওপরেই। কিন্তু খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির এই ঘৃণ্য চালও ব্যর্থ হয়ে গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়াতে এই লেখাগুলি ভাইরাল হবার পর থেকেই একই সময়ে কি করে সবাই একই লেখা লেখেন? কপি-পেস্ট করতেও তো ন্যূনতম ১ মিনিটের দরকার হয় কিন্তু এক্ষেত্রে তাও হয়নি। কিছু পোস্ট একেবারে একসঙ্গে করা হয়েছে। ফলে এই লেখা গুলি যে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত বানিয়ে লেখা তা তো দিনের আলোর মত স্পষ্ট।
অন্যদিকে শুধু বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেই চুপ থাকেনি গেরুয়া শিবির। এই ঘৃণ্য কাজের জন্যে অত্যন্ত কদর্য ভাষায় তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে মোদী শিবির।আজ সকাল থেকে ‘গেরুয়া বাহিনী’ নামক এক ফেসবুক পেজের লেখা ভাইরাল হয়। তাঁদের বক্তব্য হিন্দুদের জন্যে বিদ্যাসাগরের নাকি কোনও অবদানই নেই। এই যুগে নাকি আর বর্ণপরিচয়ের কোনও গুরুত্বই নেই।এই বক্তব্যের মাধ্যমে যে ঠিক কতটা অশিক্ষার পরিচয় দিয়েছে বিজেপি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শুধু তাই নয়, ভাইরাল হওয়া সেই পোস্টটায় লেখা হচ্ছে বিদ্যাসাগর নাকি সতীদাহ প্রথা রোধ করেছিলেন! এহেন ভুয়ো মন্তব্যের বিরুদ্ধে ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়াতে। যারা এহেন ভুল তথ্য সগর্বে লিখতে পারে তাঁদের পক্ষে তৃণমূলের দিকে আক্রমণ শানানোর জন্যে যে ওরকম লেখাও সম্ভব তা তো এখন স্পষ্ট!