‘কার্যত অসম্ভব।’ আশির দশকের গুজরাতে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলে সটান তা দিল্লীতে ‘ট্রান্সমিট’ করে চমকে দিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণীকে, মোদীর এমন হাস্যকর দাবিকে কটাক্ষ করেই ওপরের মন্তব্যটি করেছেন নাথানিয়েল বোরেনস্টাইন। সেইসঙ্গে একটা অডিও ফাইল, আর একটা রঙিন ছবি দিয়ে তিনি এ কথাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন, সে দু’টিই দুনিয়ায় প্রথম ইমেল অ্যাটাচমেন্ট।
বোরেনস্টাইন হচ্ছেন সিলিকন ভ্যালির সেই কম্পিউটার বিজ্ঞানী, যিনি ১৯৯২-এ চমকে দেন গোটা বিশ্বকে। ইমেলের সঙ্গে গাধাবোটের মতো তিনি জুড়ে দিয়েছিলেন একটা অডিও ফাইল, আর একটা রঙিন ছবি। ইন্টারনেটের ইতিহাস বলছে, সে দু’টিই দুনিয়ায় প্রথম ইমেল অ্যাটাচমেন্ট। তা হলে ১৯৮৭-৮৮ সালে নরেন্দ্র মোদী কীভাবে সেই অসাধ্যসাধন করেছিলেন? সে কথার উত্তরে মিছরির ছুরি চালিয়ে বোরেনস্টাইনের কটাক্ষ, ‘কার্যত অসম্ভব। যদি এমনটা ঘটে থাকে, তা হলে আপনাদের প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত প্রযুক্তি-জ্ঞানের প্রশংসা করতেই হয়।’
সম্প্রতি মোদী দাবি করেছেন, আশির দশকে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলে গুজরাত থেকে সটান তা দিল্লিতে ‘ট্রান্সমিট’ করে চমকে দিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। এ নিয়েই উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। দেদার মিম ছড়িয়ে নেটিজেনদের একটা বড় অংশ বলছেন— এটাও ‘জুমলা’। কারণ, দেশ-বিদেশে ডিজিটাল ক্যামেরার বিক্রি তখনও শুরু হয়নি। আর ইমেল? ১৯৮৬ সালে ভারতে এডুকেশনাল রিসার্চ নেটওয়ার্কে মেল চালাচালি শুরু হলেও, আমজনতার হাতে নেট আসে ১৯৯৫-এ ভিএসএনএলের হাত ধরে।
পুরনো দিনের কথা বলতে গিয়ে বোরেনস্টাইন জানান, মোদী যে সময়ের কথা বলছেন, তখনও তিনি নিজে নেট হাতড়ে চলছিলেন— কীভাবে তাতে মাল্টিমিডিয়া মেসেজ জোড়া যায়। অঙ্কে স্নাতক বোরেনস্টাইন ১৯৮৫-তে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পিএইচডি করেন। এবং সেই সময়েই ইমেলে ছবি ইত্যাদি অ্যাটাচ করার জন্য তৈরি করেন অ্যান্ড্রু প্রোজেক্ট। এতে দ্বিতীয় কোনও কম্পিউটারে মেল মারফত ছবি পাঠানো যেত। কিন্তু সে বড় ঝামেলার কাজ। তাঁর সাফ কথা, এনকোডেড মেসেজ ডিকোড করা চাট্টিখানি ব্যাপার ছিল না।
তবু অ্যান্ড্রুর অভিনব ক্ষমতা দেখে চমকে গিয়েছিলেন অ্যাপল-এর প্রাণপুরুষ স্টিভ জোবস। এবং তখনই বোরেনস্টাইন ও তাঁর টিমকে অ্যাপল-এ চাকরির প্রস্তাব দেন। তবে বোরেনস্টাইন অবলীলায় তা ফিরিয়ে দেন। দু’টো বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে ১৯৮৯-এ তিনি টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগ দেন বেল কমিউনিকেশন রিসার্চে। তার পরে ১৯৯২-এর সেই ঐতিহাসিক ১১ মার্চ। রঙিন ছবি হিসেবে ইমেলে নিজের টিমের ছবি জুড়লেন বোরেনস্টাইন। আর অডিও ফাইলে— ১৯৩৪-এ তৈরি গান ‘লেট মি কল ইউ সুইটহার্ট’-এর প্যারোডি ‘লেট মি মেল ইউ’। সেই পথ চলা শুরু ইন্টারনেট প্রোটোকল ‘মাল্টিপারপাস ইন্টারনেট মেল এক্সটেনশনস’ (মাইম)-এর।
মোদী কি তা হলে আশির দশকে মাইম-এর আগের ধাপ অ্যান্ড্রু বা ওই জাতীয় কোনও পদ্ধতিতে ছবি ‘ট্রান্সমিট’ করছিলেন? এ প্রসঙ্গে বোরেনস্টাইনের মত, ‘এ-ও কার্যত অসম্ভব। সেই সময়ে ভারতে অ্যান্ড্রু সিস্টেম কেউ ব্যবহার করতেন বলে আমার অন্তত জানা নেই।’ বোরেনস্টাইন আজ আন্তর্জাতিক ইমেল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ‘মাইমকাস্ট’-এর মুখ্য বিজ্ঞানী। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, দু’বছর বয়সে তিনি প্রথম ‘অ্যাডাল্ট বই’ পড়েন। আর তৃতীয় শ্রেণিতে কলেজের বই। তবুও সদ্য ষাট পেরনো বোরেনস্টাইন যেন কিছুতেই আশির দশকে মোদীর ডিজি-ক্যামে ছবি তোলার দাবি হজম করতে পারছেন না।