বিজেপিতে থেকেও বিজেপি বিদ্রোহী ছিলেন তিনি। ভোটের আগেই যখন মহাজোটের সলতে পাঁকানো চলছে, সেই সময় গেরুয়া শিবিরে থেকেও হাজির হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’ সমাবেশে। মোদী বিরোধিতাকে আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে। সেই সময়ই তিনি জানিয়েছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার বাংলার আয়রন লেডি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এবার সদ্য কংগ্রেসে যোগ দিয়ে প্রার্থী হওয়া শত্রুঘ্ন সিনহার সাফ কথা, বদল আসছে। ২৩ মে নতুন ভারত যাত্রা শুরু করবে। আর নরেন্দ্র মোদী বিরোধী এই সরকার গঠনে যদি কেউ নির্ণায়ক শক্তি হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন সরকারে দিদিই গুরুত্বপূর্ণ এবং গঠনমূলক ভূমিকা নেবেন।
রাজেন্দ্র নগর টার্মিনাল সংলগ্ন উড়ালপুলের নীচটায় সভা শুরুর কথা ছিল রাত ৮টায়। কিন্তু জমায়েত শুরু সন্ধ্যা থেকেই। বলিউডের স্টারকে একঝলক দেখার জন্যই হোক কিংবা মহাজোটের টান, সময় যত গড়াল, ততই জমাট বাধল ভিড়। আর তিনি আসা মাত্রই জনতার উচ্ছ্বাস প্রায় মঞ্চে গিয়ে আছড়ে পড়ল। সঙ্গে স্লোগান। চিরাচরিত ঢংয়ে সমর্থকদের আব্দার মেটাতে প্রথমেই কয়েকবার বললেন, ‘খামোশ!’ দ্বিগুণ চিৎকারে কান পাতা দায় সভাস্থলে। তবে নজরে পড়ার মতো বিষয় ওই প্রচারপর্বে পাশে দাঁড়িয়ে স্ত্রী পুনম। এটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়! লখনউয়ের মতো কেন্দ্রে ডাকসাইটে মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সমাজবাদী প্রার্থী তিনি। আর হ্যাঁ, মহাজোটেরও অন্যতম শরিক।
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই ‘পতি ধর্ম’ পালনে লখনউ কেন্দ্রে পুনমের প্রচারে গিয়ে বিতর্ক কুড়িয়েছিলেন শত্রুঘ্ন। তাতে অবশ্য তাঁর কিছু যায় আসেনি। আর এবার পালা স্ত্রীর। সেখানে ভোট মিটতেই পুনম হাজির স্বামীর প্রচারে। সভা শেষে একান্তে পাওয়া গেল বিহারীবাবুকে। বললেন, ‘আসলে অটলবিহারী বাজপেয়ী-লালকৃষ্ণ আডবানীর যুগে বিজেপির মধ্যে গণতন্ত্র ছিল। তারপর দেখলাম, দলে ওয়ান ম্যান শো ইন টু ম্যান আর্মি। মোদীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। কিন্তু আমার কাছে দেশ আগে। কোথায় গেল প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি? বছরে দু’কোটি চাকরির ঘোষণা পূরণ হল? আর, আচ্ছে দিনের স্বপ্ন? আসলে গত পাঁচ বছর ধরে কেবল বিদেশ সফর আর প্রচার হয়েছে। কাজ করবেন কখন! মোদী কখনও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। ছিলেন প্রচারমন্ত্রী! কেন্দ্রে এবার পরিবর্তন চাই।’
আর ২০১৪ সালে বিজেপি সরকারে আসার পর থেকেই ক্ষমতার এই একমুখীকরণ রীতিমতো নাপসন্দ শত্রুঘ্নর। যখনই সুযোগ পেয়েছেন, বিহারিবাবু তোপ দেগেছেন মোদী-শাহের বিরুদ্ধে। দল বদল প্রসঙ্গে সরাসরি বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম এই পাটনা সাহিব থেকেই ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে। তাই শেষমেশ কংগ্রেসকেই বেছে নিলাম। আর মহাজোট ও মমতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি স্পষ্ট বললেন, ‘মমতা দিদি ঠিক কথাই বলছেন। এই সরকারের এক্সপায়ারি ডেট এসে গিয়েছে। এবার যাওয়ার পালা।’