সাধারণ মানুষের জন্যে কাজ করে নয়, ধর্ম নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করেই সময় কাটে গেরুয়া শিবিরের। লোকসভা ভোটের প্রচারেও ধর্ম নিয়ে ইস্যুকেই তুলে ধরছে বিজেপি। বিজেপির এই ধর্ম নিয়ে বিভাজনের রাজনীতিকে তীব্র কটাক্ষ করলেন ফিরহাদ হাকিম।
মঙ্গলবার বসিরহাটের গাছা ফুটবল মাঠে নির্বাচনী প্রচার সভা করেন কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম। সেখানেই তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নরেন্দ্র মোদী সব থেকে বেশি ভয় করেন। কারণ, মমতা থাকলে ভারতবর্ষ দখল করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই মমতাকে শেষ করতে চাইছেন তিনি।’ তিনি স্পষ্ট জানান, একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই পারেন বিজেপি–র মোকাবিলা করতে। মমতাই একমাত্র নেত্রী, যিনি ধারাবাহিকভাবে মোদীর জনবিরোধী নীতির বিরোধিতা করে চলেছেন”।
গেরুয়া শিবিরের ধর্ম নিয়ে এই বিভাজনের রাজনীতিকে কটাক্ষ করে তিনি সভামঞ্চ থেকে বলেন, “হিন্দুত্বের নামে বিজেপি হিন্দুত্বকেই অসন্মান করছে। মানুষের ধর্মে ভেদাভেদ হয় না। তাই ধর্মের ভিত্তিতে ভোট হয় না। ভোট হয় কাজের নিরিখে। বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাইছে। শুধু তাই নয়, মোদি শহিদের নাম করেও ভোট চাইছেন। ভারতবর্ষের সেনাকর্মীদের তাঁরা ভাবেন, সেনারা যেন তাঁদের চাকর–বাকর।’
শুধু তাই নয়, মোদীকে ‘দেশের সব চেয়ে বড় দুশমন’ আখ্যা দিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘বিজেপি দেশের সর্বনাশ করতে চাইছে। দেশকে ভাগ করতে চাইছে। মোদিও দেশভাগের চক্রে রয়েছেন। কিন্তু আমরা দেশভাগ হতে দেব না। তাই মোদীকেই আমরা বিদায় দেব। পাঁচ বছর আগে মোদী যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তার একটাও রাখেননি তিনি উল্টে তাঁর আমলে আরও খারাপ হয়েছে মানুষের হাল’। এই সব কিছুর জবাব যে মানুষ ভোটব্যাঙ্কে দেবেন তা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ফিরহাদ।
বিজেপি–র সমালোচনা করে পুরমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিজেপি গোরক্ষকের নামে একটা পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ৭০ শতাংশ মানুষ ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চান না। যোগী আদিত্যনাথ ৩০ শতাংশের ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছেন। ৭০ শতাংশ ভোট অখিলেশ–মায়াবতী–কংগ্রেসের মধ্যে ভাগ হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মানুষ আজ ভাল নেই। তাঁরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটান।’ উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে বাংলার তুলনা টেনে তিনি বলেন, ‘বাংলায় আমরা ভাল আছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলকে সম্মান দিয়েছেন। সব সম্প্রদায়ের মানুষ ভাল আছেন। তাই ভোটে কোনও এক্সপেরিমেন্ট দরকার নেই।’
ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় গাছা গ্রামে ফিরহাদের জনসভা ঘিরে মঙ্গলবার মানুষের ঢল নেমেছিল। এদিন দু’পাশে বসিরহাট কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী নুসরত জাহান ও স্থানীয় বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসকে নিয়ে ফিরহাদ বিরোধী দলগুলির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন অপদার্থ কংগ্রেসের জন্য। কংগ্রেসের ব্যর্থতা দেখে জনগণ নরেন্দ্র মোদীকে ক্ষমতায় এনেছিল। না হলে মোদি কখনও প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না।’ এর পর তিনি গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক ঘটনা টেনে এনে বলেন, ‘কংগ্রেস ২০১৬ সালে সিপিএমের হাত ধরে চলেছে। এখন একটু আলাদা হয়েছে।’ দুই দলের এমন সম্পর্ককে কটাক্ষ করে তিনি জানান, কংগ্রেস–সিপিএমের সম্পর্ক ‘কভি খুশি কভি গম’। আবার ক’দিন বাদে তারা এক হয়ে যাবে।