২০০৯ সাল থেকে চৌধুরি মোহন জাটুয়া মথুরাপুর (সংরক্ষিত) লোকসভা আসনের সাংসদ। আর এবারও তিনি প্রার্থী। নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে এলাকায় সমস্ত রাজনৈতিক পদযাত্রা বা মিছিলে সামনের সারিতে হেঁটেছেন। খুব কম সময়ই উঠেছেন গাড়িতে। তাঁর লোকসভা এলাকার বেশির ভাগটাই নদী, খাঁড়িতে ঘেরা। তবুও তিনি স্বচ্ছন্দে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আর তাঁর জন্য উপচে পড়ছে মানুষের ভালবাসা। যা দেখে অভিভূত ও আপ্লুত চৌধুরি মোহন জাটুয়া। পুলিশে চাকরি করতেন চৌধুরি মোহন জাটুয়া। আইপিএস পদমর্যাদার অফিসার ছিলেন। চাকরি–জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জেলার দায়িত্ব সামলেছেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে প্রবেশ মন্দিরবাজারের কৃষ্ণপুরের আদি বাসিন্দা জাটুয়ার। ২০০৮ সালে জাটুয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সহ–সভাপতির পদ লাভ করেন। পরের বছর মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়ার দায়িত্ব পান। প্রথম বারেই জয়ী হন। ইউপিএ–২ সরকারে তিনি কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীও হন। আগের বারের থেকে বেশি মার্জিনে জয়ী হন ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে। এবার জিতে হ্যাটট্রিক করতে চান জাটুয়া।
এক সময় সুন্দরবনকে দুর্গম এলাকা বলা হত। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের কর্মকাণ্ডে সামগ্রিক উন্নয়নের ছোঁয়া সুন্দরবন জুড়ে। প্রায় প্রতিটি দ্বীপে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। পড়ুয়ারা স্কুল বা কলেজে যাওয়ার জন্য পেয়েছে সবুজসাথী–র সাইকেল, কন্যাশ্রী–রূপশ্রীর ভাতা। কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে আটকানো গেছে সহজেই। পরিবর্তন হয়েছে আর্থ–সামজিক ব্যবস্থার। পিছিয়ে–পড়া মানুষ আজ বাঁচার নতুন দিশা পাচ্ছে। সৌজন্যে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প।
কুলপি ও মগরাহাট পশ্চিম ব্লক ছাড়া বাকিগুলি সুন্দরবনের মধ্যে পড়ে। মমতার উন্নয়ন এই সমস্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে। এই ব্লকগুলিতে কাঁচা রাস্তা নেই বললেই চলে। সমস্ত রাস্তা ঢালাই করে দেওয়া হয়েছে। কৃষক তাঁর উৎপাদিত ফসল অনায়াসে শহরে নিয়ে চলে আসছেন। ফলে মিলছে বাড়তি টাকা। নতুন সরকারের সৌজন্যেই হাসি ফিরেছে কৃষকের মুখে। সুন্দরবনের পর্যটন নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা ও প্রকল্পের কথা ভেবেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই এলাকার মধ্যে পড়ে বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ, হেনরি আইল্যান্ড, গঙ্গাসাগর, ভগবতপুর। এত দিন বকখালি যেতে নামখানার হাতানিয়া–দোয়ানিয়া নদী পার হতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হত ভ্রমণার্থীদের। মাসখানেক আগে নামখানা সেতুর উদ্বোধন হয়ে গেছে। নামখানা ব্লক–সহ পর্যটন শিল্পের প্রসারে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে এই সেতু।
এই লোকসভা আসনের অন্তর্গত বিধানসভা এলাকাগুলি হল কাকদ্বীপ, মন্দিরবাজার, রায়দিঘি, কুলপি, পাথরপ্রতিমা, সাগর ও মগরাহাট পশ্চিম। এ–সব এলাকার বাসিন্দাদের মূল জীবিকা কৃষি ও মৎস্য চাষ। এ ছাড়া রয়েছে লক্ষাধিক সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিকের বাস। ২০০৯ সালে আয়লা ঝড়ে সুন্দরবনের নদী ও সমুদ্রবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২০১১–তে বদল হয় রাজ্য সরকারের। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই তৈরি হয় আয়লা বাঁধ। আজও অনেক এলাকায় চলছে বাঁধ মেরামতির কাজ। তৈরি হয়েছে অনেক বহুমুখী দুর্যোগ মোকাবিলা কেন্দ্র বা ফ্লাড সেন্টার। সদ্য বাংলা ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল ফণী ঘূর্ণিঝড়। ওই সময় উপকূলের কয়েক হাজার মানুষকে আগাম ওই কেন্দ্রগুলিতে তুলে আনে প্রশাসন।