লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হবার পর থেকেই স্থগিত ছিল যাবতীয় সরকারি প্রকল্পের কাজ। তাই আস্তে আস্তে ভোট মিটতেই আবার শুরু হচ্ছে সেই সমস্ত কাজ। ২৯ এপ্রিল বীরভূমে নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। নির্বাচন বিধির নিষেধাজ্ঞার জন্যে জেলা জুড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত কৃষকবন্ধু প্রকল্পের চেক কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ নির্বাচন কমিশনের নিয়মের গেড়োয় আটকে ছিল। তাই ভোট মিটতেই জেলায় আদর্শ নির্বাচন বিধি কার্যকর হওয়ার আগে যে সমস্ত কৃষকের চেক কৃষকবন্ধু প্রকল্পে বিলি করার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল, সেগুলি এ বার বিলি করার জন্যে নির্দেশ দিল কৃষি দফতর।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৭ মে রাজ্যের কৃষি দফতর থেকে এক নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে অর্থাৎ নির্বাচন বিধি কার্যকর হওয়ার আগে কৃষক বন্ধু প্রকল্পে যে সমস্ত চাষির চেক বিলি করার জন্য জেলা কৃষি দফতর প্রস্ততি নিয়েছিল, সেই সব চেক বিলি করার ক্ষেত্রে এখন আর কোনও অসুবিধা থাকছে না। রাজ্যের ওই নির্দেশিকা পেয়ে চেকগুলি বিলি করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে জেলা কৃষি দফতর।
চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে কৃষকবন্ধু প্রকল্প চালু হয়েছে। জেলা সহকারী অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল জানিয়েছেন, কৃষকবন্ধু প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী যে চাষিদের ১ থেকে ৪০ ডেসিম্যাল পর্যন্ত কৃষিজমি রয়েছে, তাঁদের জন্য বছরে দু’কিস্তিতে ১০০০ টাকা (মোট ২ হাজার) করে বরাদ্দ। ৪০ ডেসিম্যালের বেশি জমি থাকলে বছরে দু’কিস্তিতে আড়াই হাজার টাকা করে মিলবে। এই প্রকল্পে রবি মরসুম ছাড়াও খারিফ মরসুমে চাষ করার জন্যও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়।
অমরবাবু বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে পর্যন্ত ১৮ হাজার ৭৭৪ টি চেক বিলি করা হয়। বাকি ১২ হাজার ৬৫০টি চেক ব্লক স্তরে পৌঁছে দেওয়া হলেও নির্বাচন বিধি শুরু হয়ে যাওয়ায় চেকগুলি বিলি করা যায়নি। গত ৭ মে রাজ্য সরকার ওই চেকগুলি বিলি করা যাবে বলে নির্দেশ দিয়েছে।’’ ব্লক স্তরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে কৃষি আধিকারিক জানান। এ ছাড়াও, যে ক’টি চাষিমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সেগুলির ক্ষেত্রে মৃতের উত্তরাধিকারীর হাতে এককালীন টাকা তুলে দেওয়ার জন্য ব্লক স্তরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগে পর্যন্ত জেয়া মৃত ১০ জন চাষির পরিবার ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে।
সূত্রের খবর, ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরে জেলার ১৯টি ব্লকের ১৬৭টি পঞ্চায়েত থেকে ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৯৩ জন চাষি কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্য কৃষি দফতরে আবেদন করেছিলেন। ১ লক্ষ ২৯৬ জন কৃষকের জন্য চেকের অনুমোদন মেলে। সেই মতো প্রথম দফায় জেলার ১৯টি ব্লকে ৩১ হাজার ৪২৪ জন চাষির চেক ব্লক স্তরে পৌঁছে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পরে নির্বাচন বিধি কার্যকর হয়ে যাওয়ায় চেক বিলি স্থগিত রাখা হয়।