কলকাতা দক্ষিণ থেকে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী মালা রায়। আগামী ১৯ তারিখ কলকাতায় নির্বাচন। তাই দিনরাত এক করে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। সকাল বিকেল পথসভা, রোড শো, কর্মীসভা করেই সময় কেটে যাচ্ছে তাঁর। নিজের জয় নিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী মালা।
মালার এ দেশেই জন্ম। বিদ্যাসাগর উইমেন্স কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। থাকতেন উত্তর কলকাতায় হরি ঘোষ স্ট্রিটে জ্যাঠামশাইয়ের বাড়িতে। যৌথ পরিবার। দেশের বাড়ি তমলুকে। প্রতি বছর এখানে দুর্গাপুজো হয়। স্কুলজীবন এখানেই। টালিগঞ্জেও থাকতে হয়েছে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি রাজনীতি শুরু করেছেন মালা রায়। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল যখন তৈরি হল, সেইদিন সারা রাত মমতার বাড়িতে কাটিয়েছেন। তার আগে মমতার সঙ্গে রাজনীতি করেছেন।রাজনৈতিক জীবন শুরু দক্ষিণ কলকাতা থেকেই। এখনও সেখানেই রাজনীতি করেন।
দক্ষিণ কলকাতায় রাজনীতি করার সময় নির্বেদ রায়ের সঙ্গে পরিচয়। ১৯৮৬ সালে বিয়ে। নির্বেদদের বাড়ি বাংলাদেশে। টালিগঞ্জের বাড়িতেই ১৯৮৬ সালে ওঁদের বিয়ে হয়। মালার কখনও মনে হয়নি নির্বেদ ওপার বাংলার। মালা পছন্দ করেন ওপার বাংলার খাবার। বেশি মশলা দিয়ে মালা রান্না করতে ভালবাসেন। মালাইকারি তাঁর পছন্দ। আলু পোস্ত, বিউলির ডাল তাঁর খুব প্রিয়। বিয়ের পর কিছুদিনের জন্য মালা রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। এরই মধ্যে ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে ওঠার পর আবার ফেরেন রাজনীতিতে। মমতা ব্যানার্জি যখন যুব কংগ্রেস সভাপতি সেই সময় তাঁর কমিটিতে ছিলেন মালা। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তাঁরা প্রায়ই বসতেন, আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক হত। নির্বেদও আসতেন। মালার এক মেয়ে ও এক ছেলে। নির্বেদ মেয়ের নাম দেন প্রমিতি। সম্প্রতি প্রমিতির বিয়ে হয়েছে। অধ্যাপনা করেন। সাউথ পয়েন্ট থেকে স্কুলের গণ্ডি পার করে এমএসসি পাস করেছে ছেলে। কর্মস্থল বেঙ্গালুরু।
মমতার সঙ্গে মালার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। কখনই তাঁর সঙ্গে মতবিরোধ হয়নি। ৮০–র দশকে মমতার সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। মমতা যেখানে যেতেন, সেখানে মালা থাকতেন। পারিবারিক সম্পর্ক তাঁর।
বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মায়া সেনের কাছ থেকে গান শিখেছেন। ভেবেছিলেন গান গেয়েই জীবন কাটিয়ে দেবেন। হয়নি। রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে পড়ে যান। আকাশবাণীতে নিয়মিত যেতেন। প্রবন্ধ লিখতেন। রেকর্ডিং হত। তাঁর বহু প্রবন্ধ আকাশবাণীর যুববাণীতে প্রচারিত হয়েছে। লেখার হাত বরাবরই ভাল। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখেছেন। গাছপালার প্রতি আকর্ষণ বরাবর। নিজের হাতে গাছ লাগিয়েছেন। ফুলগাছের পরিচর্যা করেন। চাকরি করতে কখনও ইচ্ছে হয়নি জানতে চাওয়া হলে মালা বলেন, ‘প্রয়োজন হয়নি। তাই ইচ্ছে হয়নি। আমার সংসার করতে খুব ভাল লাগে। আমরা খুব সুখী। আমি মনে করি সংসার গুছিয়ে না করতে পারলে রাজনীতি করা যায় না। দিনের শেষে বাড়িতে এসে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হই।’ নির্বেদ সম্পর্কে মালার বক্তব্য, ‘আমার ছায়াসঙ্গী বলতে পারেন। আমাকে সবসময় মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন, ভরসা দিয়েছেন। নানানভাবে সাহায্য করেছেন। ও না থাকলে কী যে হত, তা বলতে পারছি না।’
কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে যে ৭টি বিধানসভা রয়েছে তার সব ক’টি তৃণমূলের দখলে। কাউন্সিলররা আছেন। সকলেই তাঁর হয়ে নেমেছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচার করছেন। মমতার উন্নয়নের কথা বলছেন। দীর্ঘদিন দক্ষিণ কলকাতায় রাজনীতি করার ফলে অলিগলি সব চেনেন। একটা সময় তাঁকে যাঁরা কাজ করতে বাধা দিতেন, তাঁরাই এখন তাঁর হয়ে কাজ করেন। মালার সাফল্য এখানেই। তিনি বলেন, ‘ভোট হচ্ছে দিদির নামে। আমরা তাঁর সৈনিক মাত্র।’