লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে তখন বাকি মাত্র ৫ দিন। ঠিক সেই সময়ই দিল্লী থেকে আসে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বদলানোর নির্দেশ। হ্যাঁ, ভোটের মুখে কমিশনের এক নির্দেশেই বড়সড় রদবদল হয়েছিল কলকাতা-সহ রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনে। তা নিয়ে আরও একবার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার কলকাতার বর্তমান পুলিশ কমিশনারকে বিজেপির ‘নিজের লোক’ বলে মন্তব্য করলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, হাওয়ালার মাধ্যমে রাজ্যে যে ভোটের টাকা ঢুকছে, নির্বাচন কমিশনের বসানো এখনকার সিপি তা ধরার কাজ করছেন বলে মনে হয় না।
মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, আগের পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা দায়িত্বে থাকলে এই টাকা ধরতেন। গতকাল তিনি এ-ও বলেন, ‘আজকে দমদম এয়ারপোর্টে যে হেলিকপ্টার আসছে, প্রাইভেট জেট আসছে, চার্টার্ড ফ্লাইট আসছে, সব টাকা নিয়ে আসছে। এ লগুলো দেখবে কে? যে দেখবে (বিধাননগর পুলিশ কমিশনারের এলাকা) তাকে তো বদলি করে দেওয়া হয়েছে। যে দেখবে না, অথচ নিরাপত্তা দেবে, নিজেদের ইচ্ছে মতো তেমন দু’টো লোক বসিয়েছে। কলকাতা এবং বিধাননগর, এ দু’টোই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।’
প্রসঙ্গত, ভোটের মুখে রাজ্যে পুলিশ ও প্রশাসনের যে সব পদস্থ অফিসারকে সরানো হয়েছে, কলকাতা এবং বিধাননগরের দুই পুলিশ কমিশনার সেই তালিকায় সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য। কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে সরানোর সঙ্গেই নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দেয় বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহকেও। এ নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কও তৈরি হয় সেসময়। মুখ খোলেন মমতা স্বয়ং। তবে, শুধু পুলিশেই নয়, প্রশাসনেও জেলা শাসক-সহ বিভিন্ন স্তরের আইএএস অফিসারদের সরিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এমনকী, রবিবার ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের পরে আচমকা সরিয়ে দেওয়া হয় বাঁকুড়ার জেলা শাসককে।
সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই ক্ষোভ বেরিয়ে আসে হাওয়ালার টাকা ঢোকার অভিযোগ ঘিরে। মমতা সম্প্রতি বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় বিজেপির বিরুদ্ধে দেদার টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করছেন। বিজেপির প্রার্থী ভারতী ঘোষের মতো আরও কয়েক জনের গাড়ি থেকেও বেশ কিছু টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই প্রসঙ্গেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর পোশাকে বিজেপি এবং আরএসএস-এর লোকেরা রাজ্যে ঢুকছেন বলে তাঁর আশঙ্কা। বিজেপির নির্দেশে তাঁরা ভোটারদের ‘ভয়’ দেখাচ্ছেন। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী নামখানা এবং মেটিয়াবুরুজের সভা থেকে ফের অভিযোগ করেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সম্মান করি। কিন্তু যে কায়দায় বিজেপি তাদের কাজে লাগিয়েছে, তা অন্যায়। আপনারা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করুন। গ্রামে গিয়ে কাজ ভোটারদের ভয় দেখাবেন না। আপনাদের কাজ বুথের বাইরে থাকা।’
একই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের প্রতি তাঁর নির্দেশ, ‘রাজ্য পুলিশকেও বলছি, আপনাদের চোখের সামনে ওরা মা-মেয়েদের গায়ে হাত দিচ্ছে, কিছু বলছেন না কেন? ওদের ধমকানি-চমকানিকে ভয় পাবেন না। ওরা দু’দিনের জন্য এসেছে।’