খামোখাই বিরোধীরা তাঁকে ‘জুমলাবাজ’ বলেন! খামোখাই নিন্দুকেরা বলেন, নিজের কোনও প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন না তিনি! প্রধানমন্ত্রী হয়েই তাঁর দেওয়া একটি কথা কিন্তু রেখেছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪-য় ভোট প্রচারে বেরিয়ে তিনি কথা দিয়েছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে ‘ধোঁয়া নিকালকে দেখাউঙ্গা’। আর সে বছরই কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। ২০১৬-তে আসামেও সরকার গড়েছে তারা। তারপরই কথা রেখেছেন মোদী ও তাঁর সর্বানন্দ সোনোয়াল। ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তবে বুঝতে ভুল করেছিলেন লক্ষ্মীকান্ত পাতর, পবিত্রকুমার বরার মতো অনেকেই। তাঁরা ভেবেছিলেন, কারখানার চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরোবে। এখন বন্ধ কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে দুজনই কপাল চাপড়াচ্ছেন। আর গুনছেন মৃত্যুমিছিলে অংশ নেওয়া সহকর্মীদের সংখ্যা।
হ্যাঁ, আসামের নগাঁও পেপার মিল আর কাছাড় পেপার মিলের শ্রমিকদের চিতার ধোঁয়ায় চোখের জল আজ শুকিয়ে আসছে ২৯ মাস বেতন না পাওয়া লক্ষ্মীকান্ত পাতর বা পবিত্র বরার মতো অসংখ্য শ্রমিকের। পয়লা মে গোটা দুনিয়া যখন ব্যস্ত ছিল মহান মে দিবস পালনে, সেদিনও ধোঁয়া বেরিয়েছে চিতা থেকে। মে দিবসের আগের দিন ২৮ মাস বেতন না পেয়ে আত্মঘাতী হন ৫৫ বছরের বিশ্বজিৎ মজুমদার। বিনা চিকিৎসায় বা আত্মহত্যায় মৃতের সংখ্যা এই দুটি কাগজ কলে ৫৫। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটি কাগজ কলেরই সম্ভাবনা ছিল। এক সময়ে লাভের মুখও দেখেছিল। তবে আর পাঁচটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মতো এই দুটি কাগজ কলও রহস্যজনক ভাবে রুগ্ন হয়ে পড়ে।
বিজেপি বলেছিল, চাঙ্গা করা হবে। তারা ক্ষমতায় আসতে দুটি কাগজ কলের কর্মীরা স্বপ্ন দেখেছিলেন, চাঙ্গা হবে কাগজ কল। হয়নি। এখন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২৯ মাস ধরে বেতন বন্ধ। শুধু বেতন নয়, কর্মচারীরাদের নিজেদের জমানো প্রভিডেন্ট ফান্ড বা অন্যান্য টাকা পয়সাও পাচ্ছেন না। অবসরে গেলেও মিলছে না বকেয়া টাকা। তবু তাঁরা নিয়মিত আসছেন কাগজ কলে। হাজিরা দিচ্ছেন। আবার একরাশ হতাশা আর ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন নিজেদের ঘরে। বিজেপির মজদুর সঙ্ঘ ভোটের আগে এবারও স্বপ্ন দেখিয়েছিল শ্রমিকদের। কিন্তু ভোটের পর কারখানা বন্ধের পদধ্বনি আরও তীব্র হয়েছে।
এক সময় বরাকের পাঁচগ্রাম আর নগাঁও দুটি পেপার মিলের কারণে বেশ সরগরম ছিল। স্বচ্ছলতা এসেছিল আশপাশের গ্রামগুলিতেও। এখন সেখানে শুধুই শূন্যতা। কাগজ কলের সামনের এটিএম পর্যন্ত বন্ধ। স্থানীয়দের অ্যাকাউন্ট তো ‘১৫ লাখি’ স্বপ্ন দেখার মতোই দিল্লীর দিকে তাকিয়ে আছে! কিন্তু না, কোনও টাকাই আজও আসেনি! বিজেপি এবারও বলেছিল, কারখানা খুলবে। ভোট মিটতেই শোনা যাচ্ছে, আর খুলবে না। কারণ কাগজ কল বন্ধ করার পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে বিজেপি সরকার। দুটি কারখানায় সরাসরি হাজার দুয়েক কর্মী বেকার হতে চলেছেন। হিতাশ লক্ষ্মীকান্ত বলেন, ‘ধোঁয়ার আর দেখেছেন কী! ধোঁয়া উঠবে চিতায়। বেঁচে থাকার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী আর সর্বানন্দ সোনোয়াল।’ তাঁদের কাছে খরকুটোর মতো একটাই ভরসা, দিল্লীতে পরিবর্তন।