বিগত ৮ বছর তৃণমূল আমলে এই শহর বিরোধীদের বিক্ষোভ যে দেখেনি, তা নয়। জায়গায় জায়গায় বিরোধীদলের অত্যাচার, কলেজছাত্রদের ওপর হামলা অনেকবার দেখেছে শহর কলকাতা।
কিন্তু আজ সন্ধ্যায় যা হল এ শহরের বুকে, তা শুধু নজিরবিহীন নয়, অত্যন্ত ঘৃণ্যতম। নামেই রোড শো করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, আসলে তাঁর উপস্থিতিতে, তাঁর সামনেই শহরের বুকে কার্যত গুন্ডামি চালাল গেরুয়া বাহিনী। বাংলা এধরনের দৃশ্য আগে কখনও দেখেনি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে ইট, পাথর, রড ছুঁড়ে ভাঙচুর চালানো হলো বিদ্যাসাগর কলেজে। আর সর্বোপরি বিদ্যাসাগরের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী মূর্তিও ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হলো। আতঙ্ক যেন গ্রাস করল সন্ধ্যার কলকাতাকে।
ঘটনার পরপরই বিজেপির এই ধ্বংসাত্মক আক্রমণ নিয়ে সোচ্চার শহরের সুশীল সমাজ, বিদ্বজনেরা। সকলেই প্রায় একসুরে বলছেন, এই ঘটনা শুধু নিন্দাজনকই নয়, স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো। শহরের ইতিহাস কালিমালিপ্ত হলো আজকের এই ঘটনায়। এর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
সন্ধ্যায় এই ঘটনার পর বিদ্যাসাগর কলেজে এসে উপস্থিত হন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আজকের এই ঘটনায় শহরের একজন নাগরিক হিসেবে আমি অত্যন্ত লজ্জিত। বিজেপি আজ তাদের রোড-শো এর জন্য বহিরাগতদের নিয়ে এসে কলেজের ভেতর এই সুপরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। এমনকি বিদ্যাসাগরের মূর্তিও তাঁরা ভেঙে দিয়েছে। বাংলার শিক্ষিত ছাত্রসমাজ ও শিক্ষকরা অবশ্যই এর জবাব দেবেন বলেই আমার বিশ্বাস।”
পরিচিত নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন বলছেন, “বিজেপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়। ওটা আসলে গুন্ডাদের বাহিনী। অবাঙালি টানে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দের নাম নিতে পারেন, তাঁদের আদর্শ বুঝতে পারবেন না। আর বিদ্যাসাগর মহাশয় বোধহয় ওনাদের সিলেবাসের বাইরে। তাই চিনতে না পেরে মূর্তি ভেঙে ফেলেছে। এবারের ভোটে আমি গোটা দেশেই বিজেপির চূড়ান্ত পরাজয় চাই।”
কবি জয় গোস্বামীর কথায়, “এরা কি আদৌ মানুষ? এরা তো আসলে বর্বর। অবাক হয়ে যাচ্ছি। এরা এখনও দেশ শাসন করে কোন সাহসে? সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো ছাড়া এদের আর কোনও কাজ নেই। এরা কি ভাবে বুঝবে বিদ্যাসাগরের মর্ম?”
ভাষাবিদ ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, “বাঙালি হিসেবে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। এ আমরা কাদের ক্ষমতায় এনেছি দেশ শাসনের জন্যে। এরা বিদ্যাসাগরকেও শত্রু ভাবে! এরপর হয়তো কোনোদিন রবীন্দ্রনাথের মূর্তিও ভেঙে ফেলবে।”
কৌশিক সেন, জয় গোস্বামীদের তুলনায় বরং অনেক বেশি আক্রমণাত্মক কবীর সুমন। তাঁর কথায়, “ভোটের জন্যেই বিজেপি এরকম অশান্তি করছে। এটা আরও বাড়বে। জনগনের হাতে এবার ওদের মার খাওয়া উচিত। “
শুধু বিশিষ্ট মানুষরাই নন, শহরের সাধারণ মানুষজনের মনেও গভীর ছাপ ফেলেছে আজকের এই ঘটনা। তাঁদের অনেকেরই মতে, এই আস্ফালণ নিয়েই রাজ্যে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখে বিজেপি? এরা ক্ষমতায় আসার আগেই এরকম অত্যাচার শুরু করেছে। ক্ষমতায় এলে হয়তো রাজ্যটাকেই শেষ করে দেবেন মোদী-অমিত শাহরা। বিদ্যাসাগরের মতো ব্যক্তিত্বকে যারা সামান্য সম্মানটুকু দেখায় না, তারা কিভাবে ভাববে রাজ্যের সাধারণ মানুষের কথা? সপ্তম দফার ভোটের আগে এই প্রশ্নই খুঁজে বেড়াচ্ছে কলকাতার সাধারণ মানুষেরা।