কাকলি ঘোষ দস্তিদার, বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী। প্রথম থেকেই প্রচারে ঝড় তুলছেন তিনি। যেখানেই যাচ্ছেন বিপুলভাবে সাড়া পাচ্ছেন মানুষের। তরুণ ভোটাররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তুলবেন বলে। রোড শো-তে বেরোলে কেউ পড়িয়ে দিচ্ছেন ফুলের মালা, কেউ বা এগিয়ে দিচ্ছেন সরবত। দু’হাত তুলে মানুষ বলছেন, “দিদি আপনি জিতছেন”। এরকমই টুকরো টুকরো আবেগে ভরে উঠছে কাকলির প্রচার।
খর রোদ। ঝাঁ-ঝাঁ গরম। শাড়ির আঁচল, স্কার্ফ, কেউ–বা টুপি মাথায় রাস্তার ধারে অপেক্ষায়। ঘন ঘন ঘাম মুছে, চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে বছর ১৮/১৯–এর ছেলেমেয়ের দলটি। এক তরুণী থেকে থেকে এদিক–ওদিকের ছবি তুলে সঙ্গের ক্যামেরাটা পরখ করে নিচ্ছেন। মুখ থেকে স্কার্ফ সরিয়ে, রোদচশমাটা মাথার টঙে তুলে সহাস্য তরুণীটি বললেন, ‘কাকলিদির সঙ্গে সেল্ফি তুলব। যদি সময় দেন, একটু ফেসবুক লাইভ করব। ওনাকে আমাদের ভীষণ ভালো লাগে”। এতটাই জনপ্রিয় কাকলি।
রোদ এড়াতে রোজ সকাল–সকালই বারাসত বড়বড়িয়া লাগোয়া লোকনাথ মন্দিরের সামনে থেকে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারের প্রচারে শুরু হল বর্ণিল শোভাযাত্রা। ফুলে ফুলে সাজানো হুডখোলা জিপে এসে উঠলেন প্রার্থী। সঙ্গে স্বামী ডাঃ সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থীদের অন্যতম বারাসতের দু’বারের বিজয়ী সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তবে এই চরম ব্যস্ততার মধ্যেও সকালে পুজোর সময়ে টান পড়েনি। পুজোপাঠ সেরে কোনওমতে এক কাপ চা খেয়েই মধ্যমগ্রামের বাদু রোডের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছেন নেত্রী, স্বামী–সহ।
নিজের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী কাকলি। তিনি বলছেন, “বারাসত সংসদীয় এলাকায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। উন্নয়ন তো হয়েছেই। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে আট বছরে ঢেলে সেজেছেন এলাকা। বারাসত হাসপাতালকে সুপারস্পেশ্যালিটি হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। হাসপাতালের প্রয়োজনীয় সব কিছু সাংসদ তহবিলের টাকায় ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তা, আলো— কী হয়নি! আর আক্ষেপ? সেটা মেট্রো নিয়ে। ২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বারাসতে মেট্রো রেল চালু করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের বঞ্চনায় তা বন্ধ হয়ে যায়। এবারে নির্বাচনে জিতলে মেট্রো আনতে উদ্যোগ নেব। আর, বিধাননগর–রাজারহাট এলাকায় কয়েকটি জায়গায় এখনও পানীয় জল ও আলোর সমস্যা রয়েছে। সেই সব কাজ করতে হবে”।
সাংসদের কাজে এলাকাবাসীরা কতটা খুশি? লক্ষ্মীনারায়ণ কলোনির কুণ্ডু সাইকেল স্টোর্সের মালিক সুকুমার কুণ্ডু জানালেন, ‘দরকারে সাংসদকে পাওয়া যায়। মেয়েকে কলেজে ভর্তির সময় ওঁর সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছিল। সে–সময় ওঁর সহযোগিতা পেয়েছি।’ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বিভুপ্রকাশ কুণ্ডু বললেন, ‘আগে এখানে বৃষ্টিতে রাস্তায় এক হাঁটু জল জমত। এখন রাস্তাঘাট আমূল পাল্টে গেছে। আলো–ঝলমল। দরকারে তাঁর লোকজন এসে সব রকম সহযোগিতা করেন।’ একই বক্তব্য বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের বিক্রেতা গোপাল দাসের। তাঁর কথায়, ‘গ্রামাঞ্চলে কী হচ্ছে জানি না। তবে এখানে কাজ হয়েছে। সে তো সকলের নজরেই পড়ছে!’ জয়পুরিয়া কলেজের লেকচারার অভীক চট্টোপাধ্যায়ের আবার সাংসদ–দিদির কাছে আবদার মেট্রো রেলের। অভীক জানান, ‘এখান থেকে রোজ অনেক ছেলেমেয়ে কলকাতায় যায় পড়াশোনা, চাকরির জন্য। যশোর রোডের ট্রাফিক একটা বড় সমস্যা। অফিস–টাইমে ট্রেনে ভিড়। নিত্যযাত্রীদের কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়। বারাসত থেকে দমদম মেট্রো রেল চালু হলে সেটার কিছুটা রিলিফ হয়। আর এটা আবদার এ কারণেই, দুঃস্থের চিকিৎসা বা অভাবী ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, সব দরকারে পাশে থাকেন দিদি। তাই এমন একজন দিদির কাছে এ আবদার তো করাই যায়!’
জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নারায়ণ গোস্বামী বললেন, ‘এবার হ্যাটট্রিক হবে! এখানে ভোটের আগেই ভোট হয়ে গেছে। গত বারের থেকে বেশি ভোটে জিতবেন দিদি। বিরোধীদের তো চোখেই দেখা যায় না! বিজেপি–র প্রার্থীকে কেউ চেনেন না। আর কংগ্রেস? মানুষ তো কাজ দেখে ভোট দেয়! এবং এখানে যে কাজ হয়েছে, সে তো খালি চোখেই নজরে আসে!’ বাস্তবিকই, চারপাশ দেখেশুনে পরিষ্কার মনে হচ্ছিল, ধারে–ভারে বা প্রচারের ব্যাপকতায় অন্তত কাকলির প্রতিদ্বন্দ্বীরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন বহু যোজন দূরে।