শুধু হিন্দুত্ববাদের বুলি আউড়ে যে এবার আর হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখা যাবে না, তা ভাল মতোই বুঝেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই এবারের লোকসভা ভোটে শিখদের ভোট পেতেও মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। এবং তা করতে গিয়েই রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে চুরাশির শিখ-বিরোধী দাঙ্গার অভিযোগ তুলে ভোটের বাজার গরম করছেন মোদী এবং তাঁর দল বিজেপি। তবে, চৌকিদার রাজধানী দিল্লীর শিখ ভোটে ভাগ বসাতে চাইলেও, শিখ ভোটারদের বড় অংশই কিন্তু বলছেন, ‘রাজীব গান্ধী নেই, দাঙ্গার ইস্যুও আর নেই।’
রবিবার দুপুরে আইএনএ মার্কেটের পেছনে লক্ষ্মীদেবী কো-এড স্কুলের বুথে ভোট দিতে এসে সরকারি অফিসার গুরপ্রীত সিং যেমন বললেন, ‘রাজীব গান্ধী যদি ভুল করেও থাকেন, তাঁর শাস্তি ছেলে রাহুল পাবেন কেন? যিনি আর বেঁচে নেই, তাঁকে দোষারোপ করে রাজনীতি করা বোকামি। জেনে-বুঝে প্রতিবার ভোটের মুখে শিখ সম্প্রদায়কে উসকে দেওয়ার চক্রান্ত। সামান্য কিছু লাভ হয়তো ঘরে তুলবে বিজেপি। কিন্তু বেশির ভাগ শিখ ওসবে কান দেবে না। বরং বিজেপি বা কংগ্রেস নয়, আম আদমি পার্টির কাজ দেখে ভোট দেবে। কারণ বিজলি, পানি ও শিক্ষায় অভূতপূর্ব সংস্কার এনেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।’
বছর দশেক বয়স ছিল গুরপ্রীতের। অশান্তির সময় টিনের বাক্সে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। ছোটবেলার অন্ধকারাচ্ছন্ন স্মৃতি ভুলে যেতে চান তিনি। বলেন, দাঙ্গাপীড়িতদের ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে বাড়ি, চাকরি পাওয়ার কথা। তাঁর আত্মীয় সীতা কুমারী গুরপ্রীতের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, ‘যাঁরা ভোটের দু’-একদিন আগে দাঙ্গার ক্ষতে নুন ছিটিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা আসলে আসলি মুদ্দা থেকে নজর ঘোরাতে চাইছেন। আমরা বুঝি।’
আবার চিত্তরঞ্জন পার্কের রাইসিনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলবীর সিং বিজেপির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পাঁচ বছরে মোদী সরকার কী করেছে, সেই কথা বলুক ওরা। প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে না ভুলে গেছে? আমরা ওই পুরনো কথা ভুলে গেছি। রাজীব গান্ধী নেই, ওই ইস্যুও আর নেই।’ উল্লেখ্য, প্রতিবারের মতো এবারও নির্বাচনের মুখে উঠে এসেছে ’৮৪-র দাঙ্গার প্রসঙ্গ। সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা স্যাম পিত্রোদা এক প্রশ্নের জবাবে মন্তব্য করেছিলেন, ‘পিছলে ৫ সালমে মোদীজি কেয়া কিয়া উসকা হিসাব দিজিয়ে। ’৮৪-মে শিখ দাঙ্গা হুয়া তো হুয়া।’
পিত্রোদার এমন মন্তব্যের পর থেকেই লেগে পড়েছে বিজেপি। রবিবারের ভোটে অবশ্য তার প্রভাব চোখে ধরা পড়ল না। দিল্লীর পাশাপাশি পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতেও শিখ দাঙ্গার ইস্যু কাজে লাগাতে চেয়েছে বিজেপি। এই নিয়ে নির্বাচনী সভা গরম করতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিজেপির অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডল থেকেও রাজীব গান্ধীর বয়ান-সহ নানাবতী কমিশনের রিপোর্ট ইত্যাদি টুইট করা হয়েছে। কিন্তু রাজীব গান্ধী ও শিখ-বিরোধী দাঙ্গার প্রভাব এবারের ভোটে পড়বে না বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।