‘মোদীজি সেনাকে বললেন, আকাশ মেঘে মেঘে ঢাকা। এই সময় পাকিস্তানের র্যাডার ঠিকঠাক কাজ করবে না। যাও, মেঘের আড়ালে লুকিয়ে টুক করে শত্রুপক্ষের সীমানায় ঢুকে বোমাটি ফেলো। আবার মেঘের আড়ালেই ফিরে এসো। একেবারে মেঘনাদের মতো’। গত দুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এমনই হাস্যরসাত্মক পোস্ট।
শনিবার একটি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বালাকোট সাফল্যের গাথা বলতে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর সেটা করতে গিয়েই বলে বসলেন, পাকিস্তানি র্যাডার মেঘ-বৃষ্টিতে কাজ করে না। আর তাই বৃষ্টি-ঝঞ্ঝার মধ্যেই বালাকোটে হামলা চালিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও কোনও বস্তুর অবস্থান নির্ধারণে যে র্যাডারের ব্যবহার, তা সম্পর্কে এমন একটি মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সাধারণজ্ঞান নিয়ে। বিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছে অস্ত্র। আর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের জুগিয়েছে নতুন খোরাক।
কে নেই এই মন্তব্যের খিল্লি ওড়াতে! এক প্রথিতযশা বিজ্ঞানী টুইট করেছেন, ‘হা ঈশ্বর, এই দিনও দেখতে হল!’ সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অমোঘ তত্ত্ব সমৃদ্ধ দুমিনিটের ক্লিপিং।
এমন তত্ত্বে ঘোর মোদীভক্তদের ল্যাজেগোবরে অবস্থা। তাঁরা বলছেন, ‘মোদীজি এমন বুদ্ধি দিয়েছিলেন তো দিয়েছিলেন, সেটা আবার বড় মুখ করে বলতে গেলেন কেন?’ আরেক ভক্ত টুইটে লিখেছেন, ‘আমিও মোদীভক্ত, কিন্তু এবার যে বড় বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন মোদীজি’। আর ঠাট্টা? সে তো নির্বাচনের যাবতীয় ট্রেন্ডিং রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে।
সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও মোদীর এমন তত্ত্বের মজা লুঠতে ছাড়েননি। ‘মোদীজি বোধহয় ১৫ লাখ টাকা অ্যাকাউন্টে দিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু মেঘের আড়ালে সব টাকা আটকে আছে’, লিখেছেন সঞ্জয় ভোগলে। একজন লিখেছেন, ‘মোদীজি ভারতীয় সেনাকে বলেছেন, ব্যাক গিয়ারে বিমান চালাও। যাতে পাকিস্তান বুঝতে না পারে ভারতীয় সেনার বিমান সামনে যাচ্ছে, না পিছনে যাচ্ছে।’ ঠাট্টা করে একজন লিখেছেন, ‘ইসরো জানিয়েছে, মঙ্গলযান সাফল্য পেয়েছে মোদীজির জন্য। তিনিই মঙ্গল অভিযান মঙ্গলবারে শুরু করার আইডিয়াটা দিয়েছিলেন।’ বিখ্যাত টুইটার হ্যান্ডেল ‘অ্যায়সি ত্যায়সি ডেমোক্রেসি’র একটি টুইটে বলা হয়েছে, ‘মোদীজি ইসরোকে উপদেশ দিয়েছেন, এখন চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর সঠিক সময় নয়। পূর্ণিমাতে অভিযান শুরু করতে হবে। তখন পূর্ণ চন্দ্র থাকে। যান নামানোর বেশি জায়গা পাওয়া যাবে।’কেউ আবার শেয়ার করেছেন বিজয় মালিয়ার ছবি। বিমানের ককপিটে বসে মালিয়া বলছেন, ‘’একদিন মোদী ফোন করলেন। বললেন, আজ মেঘলা দিন। কেটে পড়। কেউ ধরতে পারবে না। সেভাবেই আমি পালালাম।’
এসেছে একাধিক মিম। একটিতে দেখা যাচ্ছে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী একটি সাইকেলের পিছনে লুকিয়ে গুলি চালিয়ে লড়াই করেছেন। সাইকেলটিকে ক্লাউড কভার বলে ঠাট্টা করেছেন কেউ কেউ। কেউ শেয়ার করেছেন, লাহোরের আবহাওয়ার স্ক্রিনশট। যেখানে দেখা যাচ্ছে, মেঘে ঢাকা লাহোর। ঠাট্টা করে তাঁরা বলছেন, ‘আজ কিন্তু ফের এয়ার স্ট্রাইকের সম্ভাবনা রয়েছে।’
সিরিয়াস প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। কী করে দেশের প্রধানমন্ত্রী এভাবে জাতীয় নিরাপত্তার টেকনিক্যাল দিক নিয়ে কথা বলেন? আর সত্যিই যদি মোদির এই উদ্ভট পরামর্শ মেনে ভারতীয় বায়ুসেনার কমান্ডারদের মেঘলা, বৃষ্টিস্নাত দিনে বিমান অভিযান করতে পাঠানো হয়ে থাকে, তবে তো তা আরও অন্যায়। এয়ার চিফ মার্শাল, যাঁর এসব বিষয়ে স্পষ্ট জানা, তিনিও প্রধানমন্ত্রীকে বললেন না যে প্রস্তাবটি অবাস্তব? কদিন আগেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মোদি যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকেন, তাহলে লাভ হবে পাকিস্তানের।’ সেই কথাটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। বলেছেন, যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে এইরকম ধারণা, শত্রুদেশ তাঁকেই তো প্রশাসনের প্রধান হিসেবে চাইবে।