‘আমার সন্দেহ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর উর্দি পরে আরএসএস ঢুকেছে।’ ষষ্ঠ দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাড়বাড়ন্ত দেখে এবার এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরএসএস নিজেদের লোকেদের কেন্দ্রীয় বাহিনীর উর্দি পরিয়ে রাজ্যে ঢুকিয়েছে বলে অভিযোগ করে রবিবার বাসন্তীর সভায় তিনি বলেন, ‘আমার সন্দেহ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর উর্দি পরে আরএসএস ঢুকেছে। ওরা গুলি চালাচ্ছে। একজন আহত হয়েছেন।’ একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রীর হুঙ্কার, ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে গণতান্ত্রিক ভাবে বাংলাকে করা অপমানের জবাব দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ষষ্ঠ দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছে তৃণমূল। ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী গুলিও চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের দাবি, সেই গুলিতে আহত তাদের এক সমর্থক। বাসন্তীর সভায় সেই ঘটনার উল্লেখ করেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে তুলোধোনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ‘ওঁরা লাইনে দাঁড়ানো লোকেদের মোদীকে ভোট দেওয়ার কথা বলছেন। এ রকম দেখলেই অভিযোগ জানাবেন। লজ্জা করে না? কাল যখন মোদী থাকবেন না, তখন কী করবেন?’ তিনি এই অভিযোগও করেন, মালদআ দক্ষিণে বিজেপি প্রার্থীর স্বামী এখন অবসরপ্রাপ্ত হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে কাজ করছেন। তাঁর নির্দেশেই কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হচ্ছে রাজ্যে। মমতার প্রশ্ন, ‘এটা কি একটা নিরপেক্ষ ব্যবস্থা?’
তবে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখিয়ে আমাদের ধমকে চমকে লাভ নেই। সবটাই বেআইনি ভাবে হচ্ছে। কাগজপত্র আমাদেরও তৈরি আছে। ভোটের পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মা ভাই বোনেদের গায়ে হাত দেওয়ার এক্তিয়ার আপনাদের নেই।’ কেন্দ্রীয় বাহিনীর আচরণে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, ‘যাঁরা এই কাজগুলো করাচ্ছেন তাঁদের বলছি, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বদলা নেব। গণতান্ত্রিক বদলা। ছেড়ে কথা বলব না। এভাবে বাংলাকে অপমান করতে পারেন না। কে আপনি, আইন শৃঙ্খলায় হস্তক্ষেপ করছেন? এটা রাজ্যের বিষয়। রাজ্য পুলিশ কি পুলিশ নয়? এটা অসাংবিধানিক।’
আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতি মমতার বার্তা, ‘আপনারা আসবেন, কাজ করবেন, চলে যাবেন। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলার কোনও অধিকার আপনাদের নেই।’ বাসন্তীর পর বারুইপুর এবং সোনারপুরের সভা থেকেও একই ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আক্রমণ করেন মমতা। এক্তিয়ার ভেঙে কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথে ঢুকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে সোনারপুরের সভায় তিনি বলেন, ‘বুথের দরজায় থাকবে রাজ্য পুলিশ। আপনারা কেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন? কীসের ভয়ে? আপনারা কি চাকরি হারানোর ভয় পাচ্ছেন?’ মমতার সাফ কথা, ‘আমি নিজে পুলিশমন্ত্রী। রাজ্য পুলিশ মাথা উঁচু করে নিজের দায়িত্ব পালন করবে। আমরা কেউ মরে যাইনি।’ ভোট শেষ হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন বা কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় যে রাজ্য পুলিশ থাকবে না, এভাবে সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।