লোকসভা নির্বাচন শেষের দিকে। পাঁচ দফার নির্বাচন শেষ হয়ে ষষ্ঠ দফার ভোটগ্রহণ চলছে। উন্মাদনার পারদ তাপমাত্রার মতই ঊর্ধ্বগামী। প্রচারও চলছে পাল্লা দিয়ে। বিজেপি, কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল – যুযুধান সবপক্ষই মাঠে-ঘাটে, দেওয়ালে-ওয়ালে একে ওপরের সাথে মেতে আছে।
নির্বাচন বলতে বাংলায় যে ছবিটা আমরা দেখতে অভ্যস্ত, তার অব্যাহতি হয়নি এবারেও। সকাল থেকে টিভিতে, চ্যানেলে চ্যানেলে বিরোধী প্রার্থীদের নাকি-কান্না – অবাধ ভোট লুঠ হচ্ছে। বাংলায় বুথের সংখ্যা প্রায় ৮০,০০০। ৬ই মে পর্যন্ত প্রায় ৪২০০০ বুথে ভোট হয়ে গেছে। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ, ভোট লুঠ, ছাপ্পা, রিগিং নিয়ে সরব। দাবিও উঠেছে বহু কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচনের।
আদতে নির্বাচন কমিশন কটা বুথে পুনর্নির্বাচন ঘোষণা করেছে? ৬। হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন, ৬। ৪২,০০০ বুথের মধ্যে মাত্র ৬টি বুথে পুনর্নির্বাচন। শতাংশের হিসেবে দাঁড়ায় ০.১৪%। এটা নাকি গণতন্ত্রের লজ্জা।
অপরদিকে, ধরুন বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার কথা। বাংলার হাওড়া জেলার চাইতেও ছোট একটি রাজ্য। দুটো লোকসভা কেন্দ্র। দুটি কেন্দ্রের মধ্যে একটিতে ব্যাপক ছাপ্পা ও রিগিংয়ের অভিযোগে পুরো কেন্দ্রে ভোট বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। দেশের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন। বিরোধী কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে কাঁটা মুরগির মাথা ঝুলিয়ে শাসানি দিচ্ছে বিজেপি কর্মীরা। নির্বাচনে শান্তি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অক্ষম কমিশন কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ভোট বাতিল করে দেন। আজ ১২ই মে সেখানে চলছে পুনর্নির্বাচন।
এর আগে আমরা দেখেছি তামিল নাডুতে ভোটবাতিল হয়েছে। কারণ অবশ্য ব্যাপক জালনোট উদ্ধার এবং টাকা ছড়ানোর অভিযোগ। এইখানেও দক্ষিণের সাথে বাংলার মিল। সৌজন্যে বিজেপির ঘাটালের প্রার্থী। কোটি কোটি টাকা গাড়ি করে পাচার করতে গিয়ে বামালসমেত পাকড়াও হন তিনি। আরেক বিজেপি প্রার্থীকে তো নিজের কেন্দ্রে ঢোকার অনুমতির জন্য কোর্টের চক্কর লাগাতে হয়। সম্প্রতি আরেক বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে উঠেছে শিশু নিগ্রহের অভিযোগ। এহেন রত্নদের প্রার্থী বানিয়ে বিজেপি গণতন্ত্রের কথা বলে কোন মুখে?
বাংলার ০.১৪% বুথে পুনর্নির্বাচন নিয়ে যখন বিরোধী থেকে মিডিয়া সবাই সরব, সেখানে ত্রিপুরার ১০০% বুথে পুনর্নির্বাচন নিয়ে কোথাও কোনও আলোচনা নেই। আপনারাই বিচার করুন। গণতন্ত্র বিরোধী কে? তৃণমূল না বিজেপি?
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত