আজ বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বাদুড়িয়ার আটঘরা হাই স্কুল মাঠে জনসভা করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানেও উপস্থিত সকলকে বক্তব্যের শুরুতেই আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। রমজানের শুভেচ্ছাও জানান অভিষেক। আজকের এই মাত্রাছাড়া গরমের মধ্যেও বিপুল সংখ্যক মানুষ সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সকলের কথা ভেবেই এই সভায় তাঁর বক্তব্য দীর্ঘায়িত করেননি। অন্যান্য সভার মত এই খানেও মোদীর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি।
আজকের এই সভা বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী নুসরত জাহানের সমর্থনে হয়। এই তীব্র গরম উপেক্ষা করেও যেভাবে বহু মানুষ এসেছেন সেই স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে অভিষেক বলেন, এই বিপুল জনজোয়ার প্রমাণ করছে বাংলার মাটিতে মানুষ আস্থা রাখেন তৃণমূলের ওপরেই। এই আবেগই যে আগামীদিনে ধর্মনিরপেক্ষ ভারত গড়তে মমতার সহায়ক হবেন তাও জানান তিনি। আজ যারা এসেছেন তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছেন যে ১৯ মে ভারতের মাটি থেকে বিজেপিকে উৎখাত করবেন। অভিষেক বলেন, মানুষের ওপর তাঁর বিশ্বাস আছে।
এরপরে অভিষেক বলেন, “এখন গোটা দেশ বলে, দেশ কি নেত্রী ক্যায়সি হো, মমতা দিদি জ্যায়সি হো’। ২০১৪ সালে সাম্প্রদায়িক বিজেপি, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস, হার্মাদ সিপিএম-এর সঙ্গে লড়াই ছিল ।এবার লড়াইটা মূলত দুটো আদর্শের, দুটো মানুষের। এক হল দুর্নীতিগ্রস্ত মোদী এবং সততার প্রতীক বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সবাই বিজেপির বশ্যতা মানলেও মমতা মাথা নোয়ায়নি। তাঁকে ধমকে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন তোমরা যত বাংলাকে আঘাত করবে আমাদের যা প্রতিবাদ করার করব কিন্তু মাথা নত করব না”। তিনি আরও বলেন, “ আপনাদের এই ভরসাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও অনুপ্রাণিত করেছে”।
নোটবন্দীর নামে মোদী যেভাবে মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়েছিলেন তার তীব্র বিরোধিতা করেন অভিষেক। তিনি বলেন, “ যে মোদী বাংলাকে লাঞ্ছিত করেছেন সেই বাংলাতেই তাঁকে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতে হয় ভোট দাও বলে। পাঁচ বছর ধরে যেভাবে উনি মিথ্যা কথা বলেছেন এবার তা শেষ হওয়ার পালা। সাধারণ মানুষ আর তার ভুয়ো কথায় ভুলবেন না”।
সিপিএম বা কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে যে তা নষ্ট হয়ে যাওয়া তাও উল্লেখ করেন অভিষেক। আর তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে যে মমতার উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হওয়া তাও বলেন তিনি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যেই যে রাস্তাঘাট স্কুল কলেজ আলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা সব পেয়েছেন মানুষ সেই কথা বারংবার ফিরে আসে তার কথায়। অন্যদিকে মোদী যে আদতে কিচ্ছু করেননি সেই ব্যর্থতার চিত্রও তুলে আনেন অভিষেক।
অভিষেক আরও জানান, “ আজকের বিপুল জনজোয়ার বুঝিয়ে দিচ্ছে মানুষ আছে তৃণমূলের পাশেই। আমি এই আবেদনই করতে চাই গতবারের তুলনায় এবার আরও বেশি লিডে আমাদের প্রার্থীকে জেতান। এমন ভাবে জেতান যাতে আর কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। মোদী পাঁচ বছর আগে বলেছিলেন আচ্ছে দিন আসবে, কিন্তু এখানে কেউ বলতে পারবে না যে আচ্ছে দিন এসেছে। আচ্ছে দিনের নামে যদি কারোর লাভ হয়ে থাকে তা শুধুমাত্র মোদীর।আচ্ছে দিনের মোদী নিজের আখের গুছিয়েছেন। ওনার কথা মত আপনাদের কারোর ব্যাঙ্কেই ১৫ লক্ষ টাকা ঢোকেনি তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কথা মত কন্যাশ্রী রূপশ্রী ইত্যাদি সব কিছু দিয়েছেন মানুশ আরও সমৃদ্ধ হয়েছেন। রাস্তাঘাট, আইআইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আলো ইত্যাদি সব দিয়েছে ত্রিনমুল।কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি পাঁচ বছর ধরে মানুষকে বোকা বানিয়ে রেখে গেছে”।
মোদীকে তোপ দেগে তিনি আরও বলেন, ‘মোদী নিজেকে চা ওয়ালা বললেও তাঁকে চা বিক্রি করতে দেখিনি,আজ উনি বলেন উনি চৌকিদার কিন্তু কখনও ওনাকে লাঠি হাতে পাহার দিতে দেখিনি। এমনই চৌকিদার উনি যে, নীরব মোদীরা সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে পালায়। কিন্তু আমাদের নেত্রী আজও টালির ঘরে থেকে মানুষের কথা ভাবেন। এখানেই মিথ্যাবাদী মোদী এবং বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্থক্য। ওনার কাছে মানুষের উন্নয়নের জন্যে টাকা নেই কিন্তু নিজের জন্যে আছে তাই দিল্লীতে সেভেন স্টার পার্টি অফিস তৈরী হয়।
বিজেপির হিন্দুদের নিয়ে এই বিভাজনকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “ রামনামেও ওরা আর বাঁচতে পারবে না। ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে দাঙ্গা করাই ওদের একমাত্র কাম। ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে রান্নার গ্যাসের কেন এত দাম? আর আমি বলছি জয় শ্রী রাম, ২৩ মে-র পর ভারতীয় জনতা পার্টির থাকবে না কোনও নাম। ওরা সেন্ট্রাল ফোর্স দিয়ে লড়ে আর আমরা মানুষের ভালোবাসা, দোয়া, আশীর্বাদ সততা উন্নয়ন দিয়ে লড়ি”। আজকের সভার এই উচ্ছ্বাস আবারও প্রমাণ করল মানুষ আছে মমতার পাশেই।