মেদিনীপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ডাঃ মানস ভুঁইয়া সবংয়ের ভূমিপুত্র। হাতের তালুর মত চেনেন গোটা এলাকাকে। মানুষ হিসাবেও তিনি খুব ভালো। এলাকার মানুষ চেনা ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসাবে পেয়ে খুব খুশি। প্রথম দিন থেকে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন মানস। যেখানেই প্রচারে যাচ্ছেন মানুষ আশ্বাস দিচ্ছেন, ‘দাদা আপনিই জিতছেন’। এককথায় বলা যায় মেদিনীপুর মজেছে মানসেই।
এককালের লালদুর্গ মেদিনীপুর এখন সবুজে সবুজ। প্রায় তিন দশক বামেদের দখলে থাকা ‘লালগড়’ নড়বড়ে হতে শুরু করে ২০০৮–এর পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর পুরোপুরি দখলে এল তৃণমূলের। ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ভোটে জিতলেন তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায়। তার পর আর তৃণমূলকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। উন্নয়নের জোরে আদিবাসী, গরিব মানুষের মনে জায়গা করে নিল তৃণমূল। ধীরে ধীরে মজবুত হল সংগঠন। ক্রমে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ল বাম–কংগ্রেস।
বিরোধীদের এমন নড়বড়ে পরিস্থিতিতে মানস ভুঁইয়া তাঁদের আরও কঠিন যুদ্ধে ফেলে দিয়েছেন। স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, বিজেপি–র ভাল ফলের আশাকে দুরাশায় পরিণত করেছেন মানস। দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে ভোট করার এবং সেই ভোটে জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে মানসবাবুর। তঁার বিরুদ্ধে প্রার্থী যতই ওজনদার হন না কেন, তঁাকে পেরিয়ে যেতে জানেন মানস। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, সিপিআই প্রার্থী বিপ্লব ভট্টও আছেন। এছাড়াও এসইউসিআই, শিবসেনা প্রার্থী দিয়েছে এই কেন্দ্রে। কিন্তু প্রচারের নিরিখে লড়াইয়ের ময়দানে তাদের গুরুত্ব তেমন বোঝা যাচ্ছে না।
কোন ইস্যু নিয়ে ভোটে লড়ছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ মানস ভঁুইয়া বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মানুষকে উপহার দিয়েছেন ৪৭টি প্রকল্প। এমন একটি পরিবার নেই, যেখানে রাজ্য সরকারের পরিষেবা পৌঁছয়নি। তঁারাই দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করবেন। সঙ্গে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রম।’ মজবুত সংগঠন এবং সভা থেকে রোড শো–তে উপচে পড়া ভিড় বলে দিচ্ছে মানস ভুঁইয়া এই লড়াইয়ে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছেন।
বিজেপি–র প্রার্থী খড়্গপুরের বিধায়ক দিলীপ ঘোষ। তাঁর উসকানিমূলক কথাবার্তা পছন্দ করছেন না শিক্ষিত সমাজ। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে মেদিনীপুর শহরে এই শিক্ষিত সমাজ ঝুঁকে শাসকদলের দিকে। তাঁরা চান উন্নয়ন আর শান্তি–সম্প্রীতি। ফলে ভোটের আগেই হেরে গেছেন তিনি।
শাসকদলের প্রতি সাধারণ মানুষ, আদিবাসীদের টান কেমন, তা বোঝা গেল তৃণমূলের এক প্রচার সভায় গিয়ে। শালবনি থেকে পিড়াকাঠায় যখন এসে পৌঁছল তৃণমূলের প্রচার গাড়ি তখন বেলা দেড়টা। মাথার ওপর ঠা ঠা রোদ। ঘামে জবজবে হয়ে গেছে পোশাক। তখনও ফুল হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে মালতি হেমব্রম, শেফালি মাহাতো, ঝুমা সিং–রা। তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েকশো মানুষ। সকলেই যে তৃণমূলের কর্মী তা নয়। তাঁরা তৃণমূলকে ভালবাসেন। কারণ গত সাড়ে সাত বছরে বদলে গেছে তাঁদের জীবন। তাই তাঁরা ছুটে এসেছেন তৃণমূল প্রার্থী মানস ভুঁইয়াকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাতে। মেদিনীপুর লোকসভার বহু এলাকাতেই এই ছবি দেখা গেছে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া মহিলারা পা মেলাচ্ছেন মিছিলে। মানুষকে বলছেন তৃণমূল সংসদে মজবুত হলেই দিল্লির বঞ্চনা থেকে মুক্তি মিলবে। বাংলা আবাস যোজনা থেকে বাংলা সড়ক যোজনা, লোকশিল্পীদের ভাতা সবেতেই ভালভাবে বাঁচার স্বাদ পেয়েছেন মানুষ।