লোকসভা ভোটের পর দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে এবার বাংলার আয়রন লেডি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সমর্থন করবেন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। শুক্রবারই তৃণমূলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ‘দেশের বাঘিনী’ হিসেবে মমতাকে তুলে ধরেছিলেন তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-এর সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নাইডু। আর বৃহস্পতিবার দিল্লীতে একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে আপ সুপ্রিমো কেজরিওয়ালও জানিয়ে দিলেন, প্রধানমন্ত্রী পদে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নাম প্রস্তাব হলে তাতে তিনি সমর্থন করবেন। তবে সেক্ষেত্রে মমতার কাছে তাঁর একটাই অনুরোধ থাকবে, দিল্লীকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার।
প্রসঙ্গত, দিল্লীকে পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে লড়ছেন কেজরিওয়াল। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগেও তিনি এই দাবিতে সরব হয়েছিলেন। সেই সময় নরেন্দ্র মোদী দিল্লীকে পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে কেজরিওয়ালের দাবি। পাশাপাশি, কেন সেই আশ্বাস মোদী পূরণ করেননি, তা নিয়েও বহুবার প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। গতকাল এক টুইটবার্তায় কেজরিওয়াল সেই প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় আক্রমণও করে বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে জুমলাবাজি, বিদেশ ভ্রমণ এবং লেকচার ছাড়া দেশের জন্য কিছুই করেননি প্রধানমন্ত্রী। এখন মেকি দেশপ্রেমিক সেজে ভোট চাইতে আসরে নেমেছেন তিনি।’
পরে দিল্লীতে এক সাংবাদিক বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করতে ছাড়েননি দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি কংগ্রেসকেও একহাত নিয়েছেন তিনি। সেক্ষেত্রে দিল্লীতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর রোড-শো’কে কটাক্ষ করেছেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেছেন, ‘দিল্লীতে অযথা সময় নষ্ট করছেন প্রিয়াঙ্কা। সেই সময় বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যয় করলে লাভই হত।’ এরপরেই কেজরিওয়ালের সংযোজন, যেসব রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি সঙ্ঘাত সেই রাজ্যে প্রচারে যাচ্ছেন না রাহুল-প্রিয়াঙ্কা। যেমন, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে ভাইবোন খুব একটা প্রচার করছেন না। উত্তরপ্রদেশে সপা-বসপার বিরুদ্ধে র্যালি করছেন।’ এতে বিজেপিরই সুবিধা হচ্ছে বলে মনে করছেন আপ সুপ্রিমো।
তবে ভোটের ফল বিজেপি বিরোধী জোটের পক্ষে গেলে তাঁর অবস্থান কি হবে, তা টিভি চ্যানেলের ওই সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেজরিওয়াল। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, অ-বিজেপি জোটের সঙ্গেই তাঁর দল আপ থাকবে। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে যিনিই উঠে আসুন তাঁকে সমর্থন করতে আপ নেতার আপত্তি নেই। আর এই সমর্থনের পিছনে কেজরিওয়ালের চাওয়া-পাওয়া একটাই, দিল্লীকে পূর্ণ রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করা। কেজরিওয়ালের সাফ কথা, ‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতে রাজি হলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেই সমর্থন করবে আপ।’ দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য আবারও পরিষ্কার করে দিল যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রধান মোদীবিরোধী মুখ মমতাকেই চাইছেন শীর্ষ নেতারা।