তিনি নিজেও যেমন ‘স্মার্ট’, তেমনি ক্ষমতায় এসে রাজ্যের হালহকিকত বদলে বাংলাকেও ‘স্মার্ট’ করে তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আমলে শিল্প থেকে কৃষি, সবক্ষেত্রেই ‘এগিয়ে বাংলা’। মমতার নেতৃত্বে হওয়া ঢালাও উন্নয়নে ভর করেই কেন্দ্রের ‘স্মার্ট সিটি মিশন’-এর তালিকায় নিঃশব্দে সর্বশেষ সংযোজন নিউটাউন। দেশের শততম ‘স্মার্ট সিটি’। যেখানে মিলবে সড়ক সংলগ্ন সাইকেল ট্র্যাক। রাস্তার পাশে ঝাঁ চকচকে ফুড কোর্ট। জল সরবরাহের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। স্মার্ট ওয়াটার মিটার। সর্বাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এরকম একগুচ্ছ পরিষেবা অচিরেই মিলতে চলেছে ‘স্মার্ট সিটি’ রাজারহাট-নিউটাউন-এ।
চার বছর আগে, ২০১৫ সালে ‘স্মার্ট সিটি মিশন’ ঘোষণা করে কেন্দ্র। বিভিন্ন শহরের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার পরে কোন ১০০ শহর এই মিশনে চূড়ান্ত ভাবে স্থান পাবে, তা নিয়ে তার পরে বছর আড়াই বিস্তর চর্চা ও আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সারা দেশে ১০০টি স্মার্ট সিটি তৈরি করার লক্ষে প্রত্যেক রাজ্যকে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয় কমপক্ষে একটি শহরের নাম যেন তারা এই মিশনের জন্য সুপারিশ করে। সেই মতো গত বছর অগস্ট-সেপ্টেম্বরে নিউটাউনের নাম পাঠায় রাজ্য। কেন্দ্রের কাছে নিউটাউনের নাম পাঠানোর সময় অন্তর্ভুক্ত করা হয় রাজ্য সরকারের গ্রিন সিটি প্রকল্পের নির্দেশিকাও।
অবশেষে গত সেপ্টেম্বরে মেলে কেন্দ্রের চূড়ান্ত সম্মতি। কিন্তু, সেই তথ্য এ যাবৎ জনসমক্ষে আসেনি। জানা গেছে, তালিকায় নিউটাউন স্থান পাওয়ার পর থেকে গত সাত মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্মার্ট সিটি মিশন’-এর থেকে আপাতত সব মিলিয়ে যে ৫৮ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে, তাতে এখনও পর্যন্ত সেখানে প্রায় এক কিলোমিটার সাইকেল ট্র্যাক তৈরিও হয়ে গিয়েছে। এছাড়া ফুড কোর্ট, টেলিমেডিসিন কেন্দ্র ইত্যাদি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে নিউ কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)। তবে শুধু স্মার্ট নয় এই উপনগরী হবে একই সঙ্গে গ্রিন সিটি-ও।
রাজারহাট-নিউটাউন-কে স্মার্ট-গ্রিন সিটি করার জন্য স্পেশাল পারপস ভেহিক্যাল (এসপিভি) গঠন করতে গত ২৭ অগস্ট রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তার পরেই সেপ্টেম্বরে ১০০তম স্মার্ট সিটি হিসাবে নিউটাউনকে নির্বাচিত করে কেন্দ্রীয় সরকার। এর অর্থ আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত নিউটাউনকে স্মার্ট সিটি হিসাবে গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকার সর্বোচ্চ ৫০০ কোটি টাকা ইক্যুইটি হিসাবে দেবে। রাজ্য সরকারের গ্রিন সিটি তহবিল থেকে সমপরিমাণ অর্থ ইক্যুইটি হিসাবে এনকেডিএ-কে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমস্ত অর্থ নিউটাউনের পরিকাঠামো, পরিবহণ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতিসাধন এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক নানাবিধ পরিষেবা দিতে খরচ করা হবে।
এছাড়া নিউটাউনকে স্মার্ট সিটি হিসাবে গড়ে তুলতে যে এসপিভি গঠিত হয়েছে তারা তাদের গ্রেডিং, রেটিং করিয়ে বাজারে বন্ড ছেড়ে তহবিল সংগ্রহও করতে পারবে। ওই এসপিভি-তে এনকেডিএ এবং কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ৫০ শতাংশ করে সমপরিমাণ অংশীদারিত্ব রয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘যে অর্থ পাওয়া গিয়েছে, তাতে এখনও পর্যন্ত নিউটাউনে এক কিলোমিটার মতো সাইকেল ট্র্যাক তৈরি হয়ে গিয়েছে। অত্যাধুনিক শহরের মতো গোটা উপনগরীতেই রাস্তা সংলগ্ন সাইকেল ট্র্যাক তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া অত্যাধুনিক ফুটপাথ, লাইটিং ব্যবস্থা নির্মাণের সঙ্গে টেলিমেডিসিন কেন্দ্র, ফুড কোর্ট ইত্যাদি গড়ে তোলা হবে।’