এক সময় জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়া ছিল মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল। নিত্যদিন খুনের ঘটনা ঘটত। এই ঘটনাগুলি মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছিল। অনুন্নয়নকে হাতিয়ার করে মাওবাদীরা মাথাচাড়া দিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক উন্নয়নের কর্মসূচি নেওয়ায় শেষ হয় মাওবাদীদের কার্যকলাপ। জঙ্গলমহলে ফিরে আসে শান্তির পরিবেশ। লোকসভা ভোটের প্রচারে সেই উন্নয়নই হাতিয়ার হয়ে উঠছে তৃণমূলের।
জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়া। এক সময় মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল। সন্ধে নামলেই ভয়ে সিটিয়ে থাকত গ্রামাঞ্চল। এখন আর সেই আতঙ্ক নেই। এখন চারিদিকে উড়ছে শান্তি–সমৃদ্ধির নিশান। আদিবাসী এলাকাগুলিতে সেই আগের মতো অন্ন–জলের হাহাকার নেই। দু’টাকা কেজি চাল পেয়ে সকলের ঘরের ভাঁড়ারই পূর্ণ। বাড়ির দাওয়া ঘেঁষে চলে গেছে পাকা রাস্তা। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পানীয় জলের কল। জেলাবাসী বলছেন, হঠাৎ করেই যেন বদলে গেল তাদের পিছিয়ে পড়া শুখা পুরুলিয়া। আর এই শান্তি–সমৃদ্ধির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে পরিবর্তনের সরকার আসার পর।
স্বভাবতই সেই উন্নয়নকে এবার নির্বাচনের হাতিয়ার করেছে শাসকদল তৃণমূল। ভোট ঘোষণার আগে থেকে তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছিলেন। প্রার্থী হিসেবে মৃগাঙ্ক মাহাতোর নাম ঘোষণা হতে হইহই করে মাঠে নেমে পড়েছেন দলের কর্মী–সমর্থকেরা। প্রচার, জনসংযোগে অনেকে এগিয়ে যাওয়ার পর মাঠে নামে বিরোধী দলগুলি। বিজেপি, কংগ্রেস এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ময়দানে থাকলেও তেমন একটা সাড়া ফেলতে পারেনি।
পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনে মাহাতোদের ভোট একটা বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর পাশাপাশি এই লোকসভায় আদিবাসী ভোট যে–কোনও প্রার্থীকে জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত করে দেয়। মাহাতো ও আদিবাসীরা তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকে। ফলে, রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শেষ হাসি হাসবে সেই তৃণমূলই। জঙ্গলমহলে সবুজের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর কথায়, ‘দীর্ঘদিন ধরে পুরুলিয়া–সহ গোটা জঙ্গলমহলে অশান্তির পরিবেশ ছিল। রাজ্যে ক্ষমতায় তৃণমূল আসার পর আজ গোটা জঙ্গলমহলে শান্তির পরিবেশ ফিরে এসেছে। বাম আমলে মাওবাদীদের হাতে নিত্যদিনের খুনের ঘটনা বন্ধ হয়েছে। গোটা জঙ্গলমহল–সহ জেলা জুড়ে আজ শান্তির পরিবেশ ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নও হয়েছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ–সহ সব ক্ষেত্রেই উন্নয়ন হয়েছে।’ তাঁর দাবি, উন্নয়নের সঙ্গে রয়েছে মানুষ। তাই পুরুলিয়া লোকসভা আসনে তাঁদের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। এমনকী, গতবারের তুলনায় বাড়বে জয়ের মার্জিনও।
উন্নয়নের অস্ত্রে যখন ঝড় তুলছে তৃণমূল তখন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না বিরোধীদের। বিজেপি কার্যত নাজেহাল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতে। আর কংগ্রেস বা বামেরা এতটুকুও সাড়া পাচ্ছে না মানুষের থেকে। ফলে জঙ্গলমহল জুড়ে যে ফের ঘাসফুল ফুটতে চলেছে তা একপ্রকার নিশ্চিত।