রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শব্দটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে যেন গোটা বিশ্ব। প্রত্যেক মানুষের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ের প্রতিটি স্তর নিয়ে অদ্ভুত লেখা বেরিয়েছে তাঁর কলম দিয়ে। হাসি-কান্না-আনন্দ-দুঃখ-প্রেম-বিরহ-উত্থান-পতন প্রতি স্তরে আলাদা আলাদা সৃষ্টি আছে তাঁর লেখনীতে। ছন্দে ছন্দে তিনি আছেন। ২৫শে বৈশাখ উপলক্ষ্যে টুইটে কবি প্রণাম জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বকবি আদৃত হন গোটা বিশ্বে। তাই গতকাল তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে চিনেও পালিত হল তাঁর জন্মদিবস।
বৈশাখ বাঙালির উৎসবের মাস। বছরের প্রথম দিন থেকেই বাংলা মেতে ওঠে উৎসবে। তাই বিশ্বজুড়েই চলছে বিশ্বকবির উৎসব। কোথাও জন্মদিন, কোথাও জন্মসপ্তাহ। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৭মে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন। ৭মে ও ৮মে এই দুদিনই চিনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে পালিত হল রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন। ছিল নৃত্যালেখ্য,সেমিনার, রবীন্দ্র বিষয়ক আলোচনা। বেজিংয়ের ফাংহাও থিয়েটারে বুধবার বিকেল কখনও মেতে উঠলো রবীন্দ্রনাথের ষড়ঋতুর গানে, কখনও আবার কানে বাজল আমার রাত পোহালো। প্রথমদিন দর্শকদের সুবিধার্থে জায়ান্ট স্ক্রিনে ফুটে উঠেছিল গানগুলির চিনা অনুবাদ। এছাড়াও দর্শকদের আগে থেকেই মোবাইলে গানগুলি পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। চিনা ভাষায় পরিবেশিত হল চিত্রাঙ্গদার অংশবিশেষ ‘চিত্রা’।
রবীন্দ্রনাথের ভাবনার সঙ্গে সেখানে যুক্ত হয়েছে আজকের নারীও। এছাড়াও বেশ কিছু ছাত্র চিনা ভাষায় আবৃত্তিও করেন। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত দর্শকদের বক্তব্য ছিল একটাই, একজন মানুষ এক জীবনে কীভাবে এত কিছু লিখলেন সুর দিলেন। এই অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের দায়িত্বে ছিলেন পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট ডক্টরেট গবেষক রেশমিতা নাথ, ছিলেন বেজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাসের নৃত্যশিক্ষিকা লোকেশ্বরী দাশগুপ্ত এবং পায়েল চৌধুরী। পায়েল গাইলেন গান আর নাচের দায়িত্বে ছিলেন রেশমিতা, লোকেশ্বরী। তবে চিনের মানুষ যে বাংলা ভাষা এবং রবীন্দ্রনাথ নিয়ে খবুই সচেতন তাঁর প্রমাণ পেয়েছেন লোকেশ্বরী-পায়েল-রশ্মিতারা। গত বছরও তাঁরা ভালো সাড়া পেয়েছিলেন। সেখান থেকেই তাঁদের এবছরের উদ্য়োগ। ১৮ মে কবিগুরুর স্মরণে আরও একটি অনুষ্ঠান হতে চলেছে বেজিংয়ে।
এককালে রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে এসেছিলেন টান ইউন শান। পরবর্তীতে তিনিই বিশ্বভারতীতে চিনা ভবনের প্রতিষ্ঠা করেন। তান ইউনসানের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ও বাংলার সঙ্গে চিনা ভাষার যোগাযোগ নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছিল পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি ভাষা বিভাগ। উপস্থিত ছিলেন তান চুং। সম্পর্কে ইউনসানের পুত্র। তান চুং দীর্ঘদিন ভারতে অধ্যাপনা-গবেষণা করেছেন।