রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শব্দটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে যেন গোটা বিশ্ব। প্রত্যেক মানুষের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ের প্রতিটি স্তর নিয়ে অদ্ভুত লেখা বেরিয়েছে তাঁর কলম দিয়ে। হাসি-কান্না-আনন্দ-দুঃখ-প্রেম-বিরহ-উত্থান-পতন প্রতি স্তরে আলাদা আলাদা সৃষ্টি আছে তাঁর লেখনীতে। ছন্দে ছন্দে তিনি আছেন। ২৫শে বৈশাখ উপলক্ষ্যে টুইটে কবি প্রণাম জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
টুইটে মমতা লিখেছেন, ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবসে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই’।মমতা যতই ব্যস্ত থাকুন কোনও বিশেষ দিন তিনি কখনও ভোলেন না। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
রবীন্দ্রনাথের যে কবিতাটি নিয়ে টুইট করলেন মমতা, তা এক অত্যন্ত বিখ্যাত কবিতা। যা আজও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। ভা রতের স্বাধীনতার আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখা একটি কবিতা। এটি রবীন্দ্রনাথের একটি নতুন এবং জাগ্রত ভারত সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে।
‘ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত’ দিয়ে শেষ হওয়া কবিতাটি এখন বর্তমান সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুসংস্কার, মন্দ চিন্তা, ভয়-ভীতি ইত্যাদি দূর করে জ্ঞানের উজ্জ্বল আলোতে যেভাবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন কবি, তা আজকের এই ঘুণধরা সমাজের মানসিকতাকে সজোরে আঘাত করে। ভীষণ রকম গুরুত্বপূর্ণ এই কবিতার ভাবার্থ, যে সময়ে উপনীত হয়ে কবি এ লেখার জন্ম দিয়েছিলেন সেই সময়ে এমন লেখার সমতুল্য আর কোথায়? সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর কে ভাবতে পারেন এভাবে- সীমান্তের এপার আর ওপার বাংলার সবটুকুই যখন কুসংস্কার, দুর্নীতি আর ধর্মের অপব্যাখ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন জগৎপিতার কাছে দেশের জন্যে বাঙ্গালির এর চাইতে সারপূর্ণ প্রার্থনা আর কি হতে পারে? শুধু এই কবিতাটিই নয়, রবি ঠাকুরের সব লেখাই আজও ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক। তাই হয়ত প্রেমে, বিচ্ছেদে, খুশিতে, সংকটে আমরা সবসময়েই রবীন্দ্রনাথের আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত বোধ করি।
এমন অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা হই, যা আমাদের কাছে জীবনের সবথেকে কঠিন পরিস্থিতি বলে মনে হয়। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির রাজ্যে খুঁজলে বোধহয় বুঝতে পারি যে, আমরা ইতিহাসের বা সামাজিকতার কোনও অভূতপূর্ব পর্বের সম্মুখীন হইনি। দেশ এখন যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাতে আবার রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির কুঠিরে আশ্রয় নেওয়া খুব জরুরি বলে মনে হচ্ছে। মানুষের জীবনে যে অস্থিরতা আছে, যে জাতীয়তাবোধ আছে, যে অসহিষ্ণুতা আছে বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে হয় তো তা নতুন বলে মনে হবে। কারণ এইরকম অস্বস্তিকর পরিবেশ এর আগে দেশে তেমনভাবে লক্ষ্যনীয় ছিল না। তবে আমরা ইতিহাস হাতরালে খুঁজে পাই রবীন্দ্রনাথের এমন কিছু সৃষ্টি যা থেকে, উগ্র জাতীয়তাবাদের উদ্ভব কী কারণে হয়, কোন পরিস্থিতিতে হয়, প্রশ্রয় পেলে তা কতখানি হানিকারক হতে পারে, এর মোকাবিলা কোন পথে সম্ভব সবই আছে স্বমহিমায়।