ফণীর প্রভাবে শনিবার কলকাতা–সহ গোটা রাজ্য জুড়েই পারদ ছিল নিম্নমুখী। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কোথাও কোথাও ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি কমে গিয়েছিল। দু’দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এলাকা ভেদে বেড়ে গেল ৯ থেকে ১০ ডিগ্রি! গত সোমবার এই মরশুমের সর্বাধিক গরম ছিল। গতকালের তাপমাত্রা ছিল ৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হাঁসফাঁস করা গরমে নাজেহাল হয়েছেন সকলে।
গতকাল সকালে উল্টোডাঙা ফুট ব্রিজে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন কালিকাপুরের বাসিন্দা মাধব মণ্ডল (৩৪)। অচেতন অবস্থায় ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে গেলে, মৃত ঘোষণা করা হয়। শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনে অসুস্থ হয়ে পড়েন বছর পঞ্চাশের এক যাত্রী। তঁাকে আরজিকরে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনে গরমে বছর তিরিশের এক মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তঁাকে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোমবার দুপুরে কলকাতায় আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৩২ শতাংশে নেমে এসেছিল। মঙ্গলবার তা একলাফে বেড়ে হয়ে যায় ৬৮ শতাংশ। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশ দাস জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বায়ুস্রোত জোরালো ছিল এদিন। এই কারণে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের মাত্রা বেড়েছে। জলীয় বাষ্প বেশি থাকার কারণে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাড়তে পারেনি। বরং অল্প কমেছে।
দ ক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা বায়ুস্রোত কিছুটা দুর্বল হলেই আবার তাপমাত্রা বাড়বে। সেটা এখন যে কোনও সময় হতে পারে। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে তাপমাত্রার এরকম ওঠা-নামা চলবে। তবে এই প্রচণ্ড গরম থেকে রেহাই পাওয়ার বিশেষ আশা নেই। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এদিন ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। বাকি জায়গাগুলিতে ৪০ না ছুঁলেও তার আশপাশে রয়েছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এরকম কতদিন চলবে? হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বর্ষার আগে এই সময়টায় বৃষ্টি একটু কমই হয়। কালবৈশাখী ঝড়ও তুলনায় কম হয়। স্বাভাবিক ভাবেই তাপমাত্রাও চড়ে যায়। এখনও তেমনটাই হচ্ছে। এর থেকে রেহাই দিতে পারে একমাত্র কালবৈশাখী ঝড়বৃষ্টি। ফলে যতক্ষণ না ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে, গরম বাড়তেই থাকবে। বাড়বে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি।
দক্ষিণবঙ্গে কেন এই পরিস্থিতি? আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বিহার, উত্তরপ্রদেশে পারদ চড়ে রয়েছে। সেখানে বহু জায়গাতেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব কেটে যাওয়ার পর উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। যা বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে শুকনো গরম হাওয়া বয়ে নিয়ে আসছে। এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে একদিকে যেমন গরম বাড়ছে, তেমনই কমিয়ে দিয়েছে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা। পাশাপাশি হাওয়া অফিস জানিয়েছে, মে মাসের এই সময়টাতে গরম একটু বেশিই থাকে। মাঝে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ২/৩ দিন তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল। তা না হলে গরম আরও চড়ে যেত।