রেডিওয় বাংলা? তা এখন অতীত, হাজারটা এফএম চ্যানেল, সবখানেই হিন্দি। হ্যাঁ, রেডিওয় পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, জগন্নাথ বসু, ঊর্মিমালা বসুদের যুগ আর নেই। একমাত্র ‘আকাশবাণী কলকাতা’তে ঠিকঠাক ভাবে বাংলা ভাষাটা টিকে থাকলেও শ্রোতার পরিমাণ ক্রমশই কমেছে। অধিকাংশ মানুষই বছরে একবার ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শুনতেই আকাশবাণী চালান। নাহলে সারাবছরই যে সমস্ত এফএম চ্যানেলগুলি নামেই বাংলা সেগুলিই শোনেন মানুষ। এই পরিস্থিতিতে যখন এফএম-এ বাংলা প্রায় বিলুপ্তপ্রায় ভাষায় পরিণত হয়েছে, তখন কফিনে শেষ পেরেকটা মারল ‘রেডিও মির্চি’ নামের এক বেসরকারি রেডিও চ্যানেল।
সম্প্রতি চ্যানেলের জন্য রেডিও জকি(আরজে) বা সঞ্চালক খুঁজতে এক ‘আরজে হান্ট’-এর আয়োজন করেছে তারা। তা নিয়ে পোস্টও দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর সেখানেই ঘটেছে বিপত্তি। বেসরকারি বাংলা চ্যানেলটির ওই পোস্টে ইংরাজি হরফে হিন্দি ভাষায় লেখা হয়েছে, ‘কলকাতা মে র্যাহেতা হ্যায়? হিন্দি বোলতা হ্যায়? মির্চিদার ভি হ্যায়? আব তেরা টাইম আয়েগা।’ তা বাংলা রেডিও চ্যানেলের জন্য হঠাৎ হিন্দি জানার প্রয়োজন পড়ল কেন? উঠছে এই প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে আসরে নেমে পড়েছেন নেটিজেনরা। উঠছে রেডিও মির্চিকে বয়কটা করার দাবিও। প্রতিবাদ করতে পিছুপা হননি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার কারী তৃণমূল সমর্থকরাও।
আজ তাদের তরফ থেকে একটি পোস্ট করে একগুচ্ছ প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, বাঙালি হলে চলবে না? আপনারা কি বাঙালি না? বাংলা ভাষা পছন্দ নয়? বাংলাতে বাঙালি কেন পিছিয়ে থাকবে? বাংলায় থেকে বাঙালি না খুঁজে হিন্দি খুঁজছেন, এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে! সেইসঙ্গে রেডিও মির্চির উদ্দেশ্যে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘আপনাদের এই পোস্ট বাংলাকে অপমান বলে মনে করি। বাংলাকে অপমান করলেন আপনারা।’ শুধু তাই নয়। এই আর্জিও জানানো হয়েছে, ‘বাংলায় থাকলে বাংলা ভাষায় কথা বলুন। বাঙালিকে এগিয়ে দিন। বাংলার পক্ষে থাকুন। তবেই এগোবে বাংলা।’ আর সবশেষে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগান, ‘জয় বাংলা’।
নেটিজেনদের কেউ কেউ আবার নিজের মনের কথাও জানিয়েছেন৷ একজন লিখেছেন, ‘যখন কলকাতায় প্রথম এসেছিলাম, রেডিও মানেই আমার কাছে ছিল মির্চি আর মীর। সকালে রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে দিন শুরু তারপর মীরের ফাজলামি। হিন্দি, বাংলা মিলিয়ে বেশ আকর্ষক ছিল। আজকাল তো রেডিওতে বাংলা গান শোনানোই হয় না। এমনকী একটা এফএম তো বড়াই করে বলে তারা ১০০ শতাংশ হিন্দি এফএম। এমতাবস্থায় রেডিও মির্চিতে যাও বা বাংলা ছিল। সেটাও বন্ধ হতে চলেছে। মির্চি বাংলায় এখন হিন্দি জানা আরজে চাই। বলি, দিল্লীতে বাংলা জানা আরজে নেবে তো? হিন্দির তাঁবেদারি না করে মির্চি যদি আরও বাংলা গান শোনায়, আমার মত অনেকেই যাঁরা রেডিও শোনা বন্ধ করেছেন, তাঁরা হয়তো বা ফিরে আসবেন।’